।। শুভাশীষ সেনগুপ্ত ।। কোভিড অতিমারিতে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিরসনে তৎপর রয়েছে রাজ্য সরকার। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষ যাতে খাদ্য সংকটে না পড়েন তারজন্য প্রতিনিয়ত সজাগ নজর রাখার পাশাপাশি তাদের পাশে থাকছেন প্রশাসনের আধিকারিকগণ।
এ সকল মানুষের কথা মাথায় রেখে ‘মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ’ নামে একটি জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। আর এই প্রকল্পের সুফল পেয়ে এখন উপকৃত হচ্ছেন রাজ্যের আমজনতা। ঊনকোটি জেলাতেও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন চলছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সুপরিকল্পিত ও বাস্তবমুখী চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করে চলছে রাজ্য সরকার।
মহকুমা শাসক থেকে শুরু করে জেলাশাসক এবং বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ সমন্বয় রেখে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর ও কুমারঘাট মহকুমায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনার লড়াইয়ে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদানে ইতিমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে ঊনকোটি জেলা প্রশাসন।
রাজ্য সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে তিন কিস্তিতে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কুমারঘাট মহকুমায় করোনা সংক্রমণে মৃত ৩টি পরিবার প্রথম কিস্তির ৩ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোভিড পরিস্থিতিতে জনকল্যাণমুখী কর্মধারা অব্যাহত রেখেছে রাজ্য সরকারও।
শুধু রাজ্যের গরিব অংশের পরিবারগুলিকে আর্থিক ও খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা নয়, গত বছর লকডাউনের সময়ে বহির্রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদেরও পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। তাদের খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ি ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিল প্রশাসন। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ট্রেন ভাড়া, যাত্রাপথে শুকনো খাবার, পানীয়জলের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার।
এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় প্রায় ৬/৭ মাস বিনামূল্যে ৫ কেজি করে চাল প্রদানের ব্যবস্থা করেছিল। সেই সাথে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়োরিটি গ্রুপ (পিজি) ও ডিজারভিং এপিএল পরিবারগুলির জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। এসকল পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য ছাড়াও দানাশস্য দিয়ে সহায়তা করা হয়েছিল।
করোনা মহামারির লড়াইয়ে প্রতিষেধক ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে। ত্রিপুরা। সঠিক সময়ে রাজ্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের কারণে ভ্যাকসিন প্রদানে দেশের অন্যান্য রাজ্যের কাছে দৃষ্টান্ত রাখতে পেরেছে ত্রিপুরা। বর্তমানে ১৮ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত ব্যক্তিদের কোভিড ভ্যাকসিনেশনের প্রক্রিয়া চলছে।
যার সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো ঊনকোটি জেলাতেও ভ্যাকসিনেশনের প্রক্রিয়া জোরকদমে জারি রয়েছে। এই সময়ে রাজ্যে ‘মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ’ প্রকল্পে উপকৃত হচ্ছেন প্রচুর সংখ্যায় মানুষ। বিশেষত, দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির কাছে এই প্রকল্প হাসি ফুটিয়েছে।
এই প্রকল্প অনুযায়ী রাজ্যের সমস্ত অংশের অন্ত্যোদয়, প্রায়োরিটি গ্রুপ (পিজি) ও ডিজারভিং এপিএল পরিবারগুলি ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি মশুর ডাল, ১ লিটার ভোজ্য তেল, ১ কেজি লবণ, ৩ কেজি আলু, কেজি পেঁয়াজ, ৫০০ গ্রাম সোয়াবিন, ২৫০ গ্রাম গুঁড়ো হলুদ ও ১০০ গ্রাম জিরা গুঁড়ো বিনামূল্যে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছে। ঊনকোটি জেলার চারটি ব্লক ও দুটি পুর এলাকাতেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।
এরমধ্যে কুমারঘাট ব্লকে গত ২২ জুন পর্যন্ত ৫,৭৭৪টি পরিবারে, পেচারথল ব্লকে ২, ১৬৬টি পরিবারে ও কুমারঘাট পুর এলাকায় ২,৬৩৩টি পরিবারে মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ’ প্রকল্পে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত কুমারঘাট মহকুমায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২৪,১০২টি পরিবারে ১ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য সামগ্রী বন্টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোভিড়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংস্থা সংগঠনগুলিও।