South Africa : একাধিক পুরুষকে বিয়ে করার বিষয়টি বৈধ করার সরকারি প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবাদের ঝড়

অনলাইন ডেস্ক, ২৯ জুন।। দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন নারীর একইসঙ্গে একাধিক পুরুষকে বিয়ে করার বিষয়টি বৈধ করার সরকারি প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গ্রিন পেপার নামে সরকারি নথিতে এই প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিবিসি বলছে, ১৯৯৪ সালে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের শাসনকালের অবসানের পর এই প্রথম দেশটির বিবাহ আইনে বড় ধরনের রদবদল আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

নথিটি জনসাধারণের মতামত জানানোর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে এত ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় অনেক বিশ্লেষকই বিস্মিত নন।

বিশ্বে খুবই উদারপন্থী সংবিধান যেসব দেশে রয়েছে, তার একটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির সংবিধানে সমকামী নারী ও সমকামী পুরুষদের মধ্যে বিয়ে এবং পুরুষদের জন্য বহুবিবাহ বৈধ।

টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ব্যবসায়ী মুসা এমসেলেকুর চার স্ত্রী আছে। তবে তিনি নারীদের বহুবিবাহের বিরোধী।

এমসেলেকুর বলেন, ‘এটা আফ্রিকার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেবে। এদের সন্তানদের কী হবে? তারা কীভাবে জানবে তাদের বা কে?’

এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেন শিক্ষাবিদ কলিস মাচোকো। তার জন্ম প্রতিবেশী জিম্বাবুয়েতে। সেখানে নারীদের বহুবিবাহ নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন।

তিনি এমন ২০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের একাধিক স্বামী রয়েছে। এরকম ৪৫ জন স্বামীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, যারা অন্য স্বামীদের সঙ্গে মিলে স্ত্রীর ঘর করেন।

তবে এ ধরনের বিয়ে জিম্বাবুয়ের সমাজে অগ্রহণযোগ্য এবং আইনগতভাবে স্বীকৃত নয় বলে জানান অধ্যাপক মাচোকো।

তিনি বলেন, ‘নারীদের বহুবিবাহ যেহেতু সমাজের একটা অংশ ভালো চোখে দেখে না, তাই সেখানে এ ধরনের বিয়ে হয় গোপনে। এ ধরনের সংসারের খবরও গোপন রাখা হয়। ’

কয়েকজন পুরুষ বলেছেন, তারা তাদের স্ত্রীদের যৌন চাহিদা মেটাতে অক্ষম ছিলেন। কিন্তু ডিভোর্স মেনে নেওয়ার বদলে বরং অন্য স্বামীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটাই ভালো বলে মেনে নিয়েছেন।

কোনো কোনো পুরুষের সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ ছিল তাদের বন্ধ্যত্ব। স্ত্রী যাতে সন্তানধারণ করতে পারেন, তার জন্য স্ত্রীর আরেক বিয়ে তারা মেনে নিয়েছেন। এভাবে ওই বন্ধ্যা পুরুষরা সমাজে নিজেদের ‘মুখ রক্ষা’ করেছেন।

উইমেন্স লিগ্যাল সেন্টারের আইনজীবী শার্লিন বলেন, গ্রিন পেপারের মূল লক্ষ্য হলো মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন। কাজেই মানবাধিকারের এই দিকটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘আইনের সংস্কার যেখানে লক্ষ্য, সেখানে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে নারীদের অধিকার যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেটাও দেখতে হবে। ’

সরকারি নথিতে মুসলিম, হিন্দু, ইহুদি এবং রাস্ট্রাফেরিয়ান- সব জনগোষ্ঠীরই বিবাহকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও ধর্মীয় নেতারা নারীদের বহুবিবাহকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে নিন্দা জানিয়েছেন।

বিরোধী দল আফ্রিকান ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা রেভারেন্ড কেনেথ মেশো বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘সমাজ ধ্বংস’ করে দেবে।

ইসলামিক আল-জামা পার্টির নেতা গানিয়েফ হেনড্রিক্স বলেন, ‘চিন্তা করে দেখুন, ওই নারীর সন্তান জন্মের পর ডিএনএ পরীক্ষা করে নির্ধারণ করতে হবে কোন স্বামী ওই সন্তানের বাপ!’

অধ্যাপক মাচোকো বলেন, নারীদের বহুবিবাহ প্রথা একসময় চালু ছিল কেনিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং নাইজেরিয়ায়। গ্যাবনে নারীরা এখনো বহুবিবাহ করে, সেটা ওই দেশে আইনসিদ্ধ।

সন্তানের পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সংসারে জন্মানো শিশু নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন? যে শিশু ওই নারীর গর্ভে আসছে, সে তো তার পুরো পরিবারেরই সন্তান। ’

 

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?