অনলাইন ডেস্ক, ২৭ জুন।। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমেদাবাদে এএমএ –তে জেন গার্ডেন ও কাইজান অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করেছেন।
জেন গার্ডেন ও কাইজান অ্যাকাডেমি উৎসর্গ করাকে প্রধানমন্ত্রী ভারত – জাপান সম্পর্কের আধুনিকীকরণ ও সহজ সম্পর্কের প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন।
এই দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় তিনি হিয়াগো ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন, গর্ভনর তোশিজো ইডো এবং হিয়াগো প্রিফেকচারের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইন্দো – জাপান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েন অফ গুজরাটকে দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন মাত্রা এনে দেওয়ায় , তিনি ওই সংস্থার প্রশংসা করেছেন।
জেনের সঙ্গে ভারতীয় ধ্যানের সাদৃশ্য উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, উভয় সংস্কৃতিই মনের শান্তির সঙ্গে বাইরের প্রগতি ও বিকাশকে গুরুত্ব দেয়। যুগ যুগ ধরে যোগের মাধ্যমে ভারতীয়রা যে শান্তি ও সহজ, সরল জীবনযাত্রার আস্বাদন পেতেন জেন গার্ডেনেও তারা সেই একই জিনিস অনুভব করবেন। ভগবান বুদ্ধ ধ্যানের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন। একইভাবে কাইজানের ভিতরের ও বাইরের অর্থ হল শুধুমাত্র উন্নতি করাই নয়, উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় প্রশাসনে শ্রী মোদী কাইজানের প্রয়োগ করেছিলেন। ২০০৪ সালে গুজরাটে প্রশাসনিক স্তরে কাইজানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, ২০০৫ সালে শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। অবিরত উন্নয়নের ভাবনায় প্রশাসনিক কাজে ইতিবাচক ফল অনুভূত হয়।
এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শ্রী মোদী গুজরাটে কাইজানের অভিজ্ঞতাকে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রয়োগ করেছেন। এর ফলে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জটিলতা দূর হয়েছে এবং দপ্তরগুলির আরো বেশি জায়গা ব্যবহার করতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে কাইজানকে প্রয়োগ করা হচ্ছে। শ্রী মোদী জাপানের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে সে দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্কৃতি, দক্ষতা ও শৃঙ্খলাবোধের প্রশংসা করেছেন।
জাপানের জনসাধারণের সঙ্গে মেলা মেশার পর তাঁদের উষ্ণ মানসিকতায় অভিভূত হয়ে তিনি গুজরাটকে জাপনের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে “ভাইব্রেন্ট গুজরাট সামিট”–এ জাপানের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গাড়ি শিল্প, ব্যাঙ্কিং শিল্প থেকে নির্মাণ শিল্প ও ওষুধ প্রস্তুতকারী শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১৩৫টি সংস্থা জাপানে তাদের শাখা গড়ে তুলেছে।
সুজুকি মোটর, হোন্ডা মোটর সাইকেল, মিৎসুবিসি, টয়োটা, হিতাচির মতো সংস্থাগুলি গুজরাটে কারখানা গড়ে তুলেছে। তারা স্থানীয় যুবক – যুবতীদের দক্ষতা বিকাশে উদ্যোগী হয়েছে। আইআইটি এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে যৌথভাবে তিনটি জাপান – ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট ফর ম্যানুফ্যাকচারিং হাজার হাজার যুবক – যুবতীদের দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
এছাড়াও ৫টি সংস্থায় জেইটিইআরও –র আমেদাবাদ বিজনেস সাপোর্ট সেন্টার পরিচালনগত বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছে। এর ফলে জাপানের সংস্থাগুলি উপকৃত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, গুজরাটে এখন গল্ফ খেলার অনেক জায়গা হয়েছে। একবার তিনি খোলামেলা আলাপ-চারিতায় জানতে পারেন, জাপানের জনসাধারণ গল্ফ খেলতে ভালো বাসেন।
সেই সময় গুজরাটে গল্ফ খেলার অত জায়গা ছিল না। আজ সেখানে অনেক গল্ফ কোর্স তৈরি হয়েছে। একইভাবে বর্তমানে গুজরাটে জাপানী রোস্তোরাঁ ও জাপানী ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী গুজরাটে একটি জাপানী শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকরণে আদর্শ বিদ্যালয় গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জাপানের স্কুল ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়ার সঙ্গে মূল্যবোধের সমন্বয়ের তিনি প্রশংসা করেন। এই প্রসঙ্গে টোকিওতে তাইমেই এলিমেন্টারি স্কুলে তার সফরের কথা উল্লেখ করেন। জাপানের সঙ্গে ভারতের শতাব্দী প্রাচীন সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে কাজ করার উপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন।
জাপানের সঙ্গে বিশেষ কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে আরো দৃঢ় করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে জাপান প্লাস ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা বলেছেন। জাপানের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় মি. সিনজো আবের গুজরাট সফর দু’দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল।
বর্তমান জাপানী প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সঙ্গের তাঁর অভিন্ন চিন্তা ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য বর্তমান মহামারীর সময়ে ভারত – জাপান মৈত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান এই চ্যালেঞ্জের সময়ে দুটি দেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব আরো নিবিড় হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতে কাইজান ও জাপানী কর্মসংস্কৃতি প্রসারের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত ও জাপানের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরো প্রসারিত করতে হবে।
শ্রী মোদী, জাপান ও সে দেশের জনসাধারণের উদ্দেশে টোকিও অলিম্পিকের সাফল্য কামনা করেছেন।