অনলাইন ডেস্ক, ২৫ জুন।। ২০১৭ সালের এপ্রিল, আর মাত্র দুদিন পর জিনজিয়াং থেকে অস্ট্রেলিয়ায় রওনা দেবেন মেহরে মেজেনসফ ও মিরজাট তাহের দম্পতি। চমৎকার ভবিষ্যৎ আশা করছিলেন তারা। কিন্তু এদিন দরজায় কড়া নাড়ে চীনা পুলিশ। জব্দ করা হয় তাহেরের পাসপোর্ট, তাকে ঢোকানো হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ দুর্ভাগা দম্পতির খবর প্রকাশ করেছে সিএনএন। সেখানে বলা হয়, তার পরের চার বছরে জিনজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরেই কেটেছে তাহেরের দিন। কিন্তু চূড়ান্ত রায় তখনো বাকি ছিল।
তার স্ত্রী মেজেনসফ এখন মেলবোর্নে থাকেন, যেখানে নতুন করে শুরু হওয়ার কথা ছিল তাদের যুগল জীবন। এ চার বছর ধরে আশা করছিলেন, হয়তো শিগগিরই স্বামীর দেখা পাবেন। এর মাঝে গত এপ্রিলে চীন থেকে একটি ফোন আসে মেজেনসফের বাড়িতে। তাকে জানানো হয়, বিচ্ছিন্নতাবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে তাহেরের ২৫ বছরের জেল হয়েছে।
এ তরুণী বলছিলেন, তারা কীভাবে এতটা নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন হতে পারে? আমার স্বামী কিছুই করেনি এবং ইতিমধ্যে সে চার বছর জেল কেটেছে।
১০ লাখ উইঘুর ও মুসলিম সংখ্যালঘুকে আইন-বহির্ভূতভাবে বন্দী করার জন্য একাধিকবার মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ জানিয়েছে।
কিন্তু বেইজিং বরাবরই বলে আসছে বিচ্ছিন্নবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদ রুখতে ‘ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ খুলেছে তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, ভকেশনাল ট্রেনিং-এর পাশাপাশি আলাদা প্রকল্প রয়েছে চীনের। যেখানে তাহেরের মতো অনেক উইঘুর দীর্ঘমেয়াদি সাজা কাটছেন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো স্বচ্ছ তথ্য দেয়নি চীন।
স্থানীয় সংখ্যাগুরু উইঘুরদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়ার পর ২০১৪ সাল থেকে জিনজিয়াং-এ সাজা পাওয়া বন্দীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনও অভিযোগ এসেছে পরিকল্পিতভাবে কমিয়ে আনা হচ্ছে জনসংখ্যা। স্থানীয় অধিবাসীদের চাকরির নামে দূরের প্রদেশে পাঠানো থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটছে।
এ বন্দী শিবিরগুলোর অমানবিক অবস্থা নিয়ে প্রায়ই সংবাদ প্রকাশ হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। ছাড়া পাওয়া অনেকেই জানিয়েছে, ভয়াবহ সব ঘটনা। অথচ সাজা পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য কখনো প্রকাশ করে না চীন। আর এরই আড়ালে ঢাকা পড়ে তাহের ও মেজেনসফের মতো অনেকেরই স্বপ্ন।