।। মণিমালা দাস ।। কৃষি ও কৃষকের কল্যাণ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। কৃষকের আয় দ্বিগুণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে তেমনি রাজ্য সরকারও অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। রাজ্যের কৃষকের কাছে কৃষির উন্নয়নে গৃহীত কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছে দিচ্ছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় কৃষকরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি ঋণও দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সমস্ত প্রকল্পের কাছাকাছি রাজ্য সরকারও কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী বর্গাদার ভূমিহীন কৃষক যোজনা।
উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের জমি পরীক্ষা করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সয়েল কার্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। রাজ্যের কৃষকদের কল্যাণে ও কৃষির বিকাশে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুযোগ কৃষকদের কাছে যেমন পৌঁছে দিচ্ছে তেমনি রাজ্য সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাও রূপায়িত করছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রাজ্যের ৫৬ হাজার ৪০ জন কৃষক কৃষি ঋণ পেয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৪০৭ জন কৃষক। ২০২০-২১ অর্থবছরে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পেয়েছেন রাজ্যের ৯৬ হাজার ৮৯৩ জন কৃষক।
কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে কৃষকরা যাতে সহজেই ঋণ পেতে পারেন তারজন্য কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে গত ৩ অর্থবছরে রাজ্যের ২ লক্ষ ৮ হাজার ৩৪০ জন কৃষক কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় রাজ্যের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৮৫৭ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই যোজনায় রাজ্যে ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪০৭ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজ্যে ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় গত ৩ বছরে রাজ্যে উপকৃত হয়েছেন ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬১৮ জন কৃষক। এই যোজনায় প্রত্যেক কৃষক বছরে ৩টি কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। এতে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৪১৭,৬৮ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বর্গাদার ভূমিহীন কৃষক সহায়তা যোজনায় রাজ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২১ হাজার ৩১০ জন কৃষককে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৯ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। তাছাড়া রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে।
এতে রাজ্যের কৃষকগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজ্যের ২ হাজার ১১৪ জন কৃষককে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৪ জন কৃষককে এবং 2020-21 অর্থবছরে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪৯৯ জন কৃষককে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে। কৃষির বিকাশে রাজ্যে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেও অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিলো মোট ৮.৫৪ লক্ষ মেট্রিকটন। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৭৩ লক্ষ মেট্রিকটন।
খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর শ্রী পদ্ধতিতে সংকর জাতীয় ধান চাষের এলাকা সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিয়েছে। রাজ্যের প্রয়োজনীয় ধানবীজ রাজ্যেই যাতে উৎপাদন করা যায় সেই লক্ষ্যে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজ্যে ৪ হাজার ৮৪০ মেট্রিকটন উচ্চফলনশীল ধানবীজ উৎপাদন করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪,৫৪৭.৫০ মেট্রিকটন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ হাজার ২০৬ মেট্রিকটন উচ্চফলনশীল ধানবীজ রাজ্যে উৎপাদন করা হয়েছে।