স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২১ জুন।। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য ১৮ ঊর্দ্ধ নাগরিকদের টিকাকরণে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করা৷ এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্দোলন করে টিকা আসেনা। এজন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আজ আই এম এ হাউজে আয়োজিত ১৮ উর্দ্ধ নাগরিকদের জন্য দু’দিনব্যাপী রাজ্যভিত্তিক কোভিড-১৯ টিকাকরণের বিশেষ অভিযানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
২১ ও ২২ জুন এই দু’দিন রাজ্যব্যাপী সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিশেষ টিকাকরণ শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমগ্র দেশব্যাপী ১৮ থেকে ৪৪ বছরের নাগরিকদের একসঙ্গে এত বড়মাত্রায় টিকাকরণের কর্মসূচি এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ৷ এই ধরণের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য প্রয়োজন ধৈর্য এবং দৃঢ় মানসিকতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশিত পথে এত কম সময়ের মধ্যে টিকাকরণের এই উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বে কোভিড-১৯ যখন মানবজাতির সামনে আছড়ে পরে তখন কারোরই কল্পনার মধ্যেই ছিল না দেশের মাটিতেই তৈরি হবে কোভিড প্রতিষেধক টিকা৷ এটা আমাদের দেশের গর্ব। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আজ ও আগামীকাল সমগ্র রাজ্যে একযোগে ১ হাজার ৩৪২টি কেন্দ্রে টিকাকরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের নাগরিকদের মধ্যে টিকা প্রত্যাশীদের সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ।
কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে আজ থেকে ১৮ বছরের উর্দ্ধে নাগরিকদের বিনামূল্যে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হলেও রাজ্য সরকারের উদ্যোগ ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বয়সসীমার প্রায় ৩ লক্ষ নাগরিকদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই দুই দিন টিকাকরণের বিশেষ অভিযান হলেও, এই কর্মসূচি জারি থাকবে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন সবাইকে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি এই কর্মসূচিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংগঠন সহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিডের প্রথম পর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে লকডাউন ঘোষণা করেন।
সবাই ঘরে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বসে থাকেননি। প্রথম করোনা পরিস্থিতিতে দূরদর্শিতার সাথে সমগ্র দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। আর তার ফলশ্রুতিতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় টিকা, ভ্যান্টিলেটর, অক্সিজেন কন্সেনট্রেটর সহ পরিকাঠামোর উন্নতি সম্ভব হয়েছে।
সমালোচকদের একটা অংশ ভেবেছিলেন লকডাউনের ফলে অনাহারে মৃত্যু হবে৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিশায় প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার জন্য দেশের মানুষকে এই সঙ্কটের মধ্যেও অভুক্ত থাকতে হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
৫৭৯ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ত্রিপুরা সরকার। গরীব ও প্রয়োজন রয়েছে এমন সাত লক্ষ পরিবারকে সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সাত লক্ষ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক পেনশনের দু’মাসের টাকা অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতেও ত্রিপুরা সরকার কর্মচারিদের ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে একটা অংশ যখন নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত, তখন ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে দেশবাসীর কল্যাণে নিরলস কাজ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষকদের কল্যাণে এক লক্ষ কোটির আর্থিক সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ উৎপাদিত ফল ও সব্জির সঠিক মূল্য যেন কৃষকরা পায় সেই লক্ষ্যে কিষাণ রেল চালু করা হয়েছে।
কিষাণ রেল চালু হওয়ায় ন্যূনতম ব্যয়ে ত্রিপুরার কৃষকদের উৎপাদিত ফল ও সব্জি চাহিদা অনুসারে বাজার পাচ্ছে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে প্রচার। রাষ্ট্রপতি রাজনাথ কোভিন্দ’র হাত ধরে রাজ্যের কুইন আনারস রাজ্যিক ফলের মর্যাদা পেতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কুইন আনারসের কদর বেড়েছে।
তেমনি চাহিদাও বেড়েছে। এখন রাজ্যের সুস্বাদু কাঠাল পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। এক নতুন দিশায়-নতুন ভাবনায় আমরা অগ্রসর হচ্ছি। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা বলেন, টিকাকরণে গতি আনতে রাজ্যে ইতিমধ্যেই টিকা উৎসব সহ বিশেষ টিকাকরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সমগ্র রাজ্যের কোভিড ব্যবস্থাপনা সরজমিনে খতিয়ে দেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা শাখার অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সবাল, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিস দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা রাধা দেববর্মা, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন প্রমুখ৷