স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২০ জুন।। মানুষের কল্যাণে ক্লাবগুলিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে। ক্লাবগুলিকে এজন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পগুলির সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ক্লাবগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আজ আগরতলা ক্লাব ফোরামের উদ্যোগে আগরতলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক রক্তদান শিবিরে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী ক্লাবগুলিকে দৈনন্দিন জীবনের নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সপ্তাহব্যাপী ক্যালেন্ডার কর্মসূচি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন। শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের সাথেও কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পরেও যেন মানুষের কল্যাণে আগরতলা ক্লাব ফোরাম প্রতিনিয়ত নিয়োজিত থাকতে পারে তারজন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।
আগরতলা ক্লাব ফোরামের ব্যানারে জনসহায়তাকল্পে শহরের ভালো সংখ্যায় ক্লাব একত্রিতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। এটা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ক্লাব এলাকাগুলিতে কোনও ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কিনা, স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা, কোনও পরিবারের রোজগারের স্বল্পতা আছে কিনা সেসব বিষয়ে ক্লাবগুলিকে খোঁজখবর রাখতে হবে।
প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার গৃহীত জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং এ সমস্ত প্রকল্পের সুযোগ যাতে মানুষ নিতে পারে সেজন্যও ক্লাবগুলিকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান। সপ্তাহভিত্তিক কর্মসূচিগুলি রূপায়ণের পর, তার ফলাফল পর্যালোচনার মাধ্যমে মূল্যায়নের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
শুধু তাই নয় সংশ্লিষ্ট ক্লাব এলাকার রাস্তাঘাট, স্ট্রিট লাইট, সাফাই সহ বিভিন্ন বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গোচরে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর স্বার্থে তা তৎক্ষণাৎ সারাইয়ের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলিকে ভূমিকা নিতে আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আরও বলেন, ক্লাব ফোরামের প্রস্তাব অনুসারে, এই ধরনের সামাজিক কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত ক্লাবের আর্থিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সরকারি নিয়ম মেনে কিভাবে তাদের আর্থিক সহায়তা করা যায় রাজ্য সরকার তা সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবে।
সরকার মানুষের কল্যাণে যে সমস্ত প্রকল্প রূপায়িত করছে তার সুযোগ পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ক্লাবগুলিকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও প্রকল্প ঘোষণার পর কিভাবে ধারাবাহিকতা রাখতে হয় তা করে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওডিএফ, জনধন একাউন্ট, ই-পিডিএস, ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ডের মতো পদক্ষেপ মানুষের জীবনে ধারাবাহিকতা এনেছে।
রেশনিং ব্যবস্থা বহু পুরনো হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে ই পিডিএস চালু হওয়ার পর এই কর্মসূচিতে একটা ধারাবাহিকতা এসেছে। শুধু তাই নয় যে রাজ্যগুলি ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড চালু করেছে সে রাজ্যের শ্রমিকরা কোথাও আটকে পড়লেও এই রেশন কার্ড দিয়ে সেখান থেকেই তাদের রেশন সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার দেশের কৃষকদের কল্যাণে এক লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। কিষাণ রেল চালু হওয়ার ফলে রাজ্যের উৎপাদিত কাঁঠাল, আনারস ও অন্যান্য উৎপাদিত ফল ও ফসল ন্যূনতম পরিবহণ ব্যয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে।
আগরতলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক তথা আগরতলা ক্লাব ফোরামের আহ্বায়ক প্রণব সরকার বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যেই আগরতলা ক্লাব ফোরামের আত্মপ্রকাশ।
করোনা পরিস্থিতির সময়ে নানাভাবে মানুষকে সহায়তার পাশাপাশি টিকাকরণের ক্ষেত্রেও ফোরাম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। তবে সম্প্রতি ক্লাবগুলির সেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
তৈরি হয়েছে ইতিবাচক মানসিকতা। নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যে আহ্বান জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সেই লক্ষ্যেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাজ করবে আগরতলা ক্লাব ফোরাম।
আগরতলা ক্লাব ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, আগরতলা ক্লাব ফোরামের চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল, সভাপতি দীপক মজুমদার, ফোরামের অপর আহ্বায়ক সেবক ভট্টাচার্য প্রমুখ।