।।রোমেল চাকমা।। আগরতলা, ১১ জুন।।আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর। কৃষিই অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। দেশের কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার লক্ষ্যে রূপায়িত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশে কিষাণ রেলের সূচনা। ২০২০ সালের ৭ আগস্ট আমাদের দেশে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য অন্তর্দেশীয় বাজারে রপ্তানীর সুযোগ করে দিতে কিষাণ রেলের সূচনা হয়েছিল। সেদিন মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার দেবলালী থেকে কৃষিজাত পণ্যসামগ্রী নিয়ে বিহারের দানাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল দেশের প্রথম কিষাণ রেল। দেশের কৃষকদের কল্যাণে এটা ছিল এক অন্যতম পদক্ষেপ।
যার ফলে কৃষকগণ খুব সহজেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহণের সুযোগ পেয়েছিলেন।২০২০ সালের ৭ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ১১ জুন। মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে কিষাণ রেলের পরিষেবার সুযোগ পেল আমাদের ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরা। কিষাণ রেলের সুযোগ যাতে ত্রিপুরার কৃষকগণও পেতে পারেন তার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার রেল মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল ত্রিপুরা থেকেও কিষাণ রেল পরিষেবা চালু করার জন্য৷ অবশেষে আজ এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ। আজকের দিনটি রাজ্যের জন্য ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে৷
এই প্রথম কৃষিজাত সামগ্রী নিয়ে রাজধানী আগরতলা থেকে দেশের রাজধানী দিল্লির আদর্শ নগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো কিষাণ রেল। অবশ্য এরজন্য কৃতিত্বের অংশীদার হয়ে রইলো উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল, লামডিং শাখা এবং রাজ্যের উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তর৷ ঘড়ির কাঁটায় আজ ঠিক দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় সহ উপস্থিত অতিথিগণের পতাকা নাড়ার মধ্য দিয়ে বাধারঘাট রেল স্টেশন থেকে দিল্লির আদর্শ নগরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল বহু প্রতীক্ষিত কিষাণ রেল৷
দেশের কৃষকদের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক উদ্যোগে কিষাণ রেলের সূচনা করেছিল ভারতীয় রেল। যথারীতি ২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কিষাণ রেল চালানোর ঘোষণা দেন। তারপর বাকিটা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়। মূলত, ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে কিষাণ রেলের সূচনা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য খুবই কম খরচে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যতে পরিবহণ ও বাজারজাত করার সুবিধা পেয়েছেন।
২০২০ সালের ৭ আগস্ট মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার দেবলালী থেকে দানাপুর পর্যন্ত মোট ১,৫১৯ কিলোমিটার যাত্রাপথের জন্য সময় ধরা হয়েছিল ৩১ ঘন্টা। এরপর দেশের বিভিন্ন রুটে মোট ২০৮টি কিষাণ রেল চালায় ভারতীয় রেল৷ আর উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে এই প্রথম ত্রিপুরা কিষাণ রেল চালানোর গৌরব অর্জন করলো। আজ আগরতলার বাধারঘাট রেল স্টেশন থেকে কিষাণ রেল চলার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সূচনা হয়।
এদিন ত্রিপুরার উৎপাদিত সুস্বাদু আনারস নিয়ে দিল্লির আদর্শ নগরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় রাজ্যের সর্বপ্রথম কিষাণ রেল৷ শুধু দিল্লি নয়, আগামী ১৬ জুন পশ্চিমবঙ্গের চিৎপুরের উদ্দেশ্যে কৃষিজাত পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাবে এই কিষাণ রেল। কিষাণ রেলের মাধ্যমে পণ্য পাঠানোর তদারকিতে ছিলেন উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের এডিআরএম বলদেব সিংহ ও সিনিয়র ডিসিএম অশোক কুমার দে। কিষাণ রেলে কৃষিজাত সামগ্রী পরিবহণের প্রক্রিয়া নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করেন খোদ পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের সিনিয়র ডিসিএম। পাশাপাশি কিষাণ রেল সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
তাঁর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, কিষাণ রেলে কৃষিজাত পণ্যসামগ্রী পরিবহণের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা সমগ্র কৃষক সমাজের কাছে সুখবর বয়ে নিয়ে এসেছে। আজ কিষাণ রেলের মাধ্যমে দিল্লির উদ্দেশ্যে নেওয়া হয় রাজ্যের সুস্বাদু আনারস। এরমধ্যে সিপাহীজলা জেলার কৃষি সংযোগ এগ্রো প্রোডিউসার কোম্পানী লিমিটেড নামে একটি সংস্থা দিল্লি হয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে পাঠাচ্ছে মোট ৫ মেট্রিক টন কুইন প্রজাতির আনারস। কিছু কাঠাল পাঠানো হয়েছে গুয়াহাটিতে।
আগরতলা থেকে দিল্লি ২,৪৩৫ কিলোমিটার যাত্রাপথের জন্য ৪৯ ঘন্টা এবং আগরতলা-কলকাতা ১,৫৩২ কিলোমিটার যাত্রাপথের জন্য সময় ধরা হয়েছে ৩৩ ঘন্টা। উল্লেখ্য, আপাতত এই কিষাণ রেলে মোট ২০টি বগি থাকছে। এরমধ্যে ১৮টি জিএস এবং ২টি এসএলআর টাইপের বগি। এই কিষাণ রেলে কৃষিজাত পণ্য পাঠাতে ব্যয় ধরা হয়েছে আগরতলা থেকে চিৎপুর প্রতি টনে ২,০২৫ টাকা এবং আগরতলা থেকে দিল্লির আদর্শনগর প্রতি টনে ২,৭৭৫ টাকা।
আগরতলা থেকে গুয়াহাটি প্রতি কেজিতে ০.৮৮২ টাকা খরচ পড়বে৷ আগরতলা থেকে পরবর্তী সময়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে কিষাণ রেল যাত্রা করবে ২৫ জুন, ৯ জুলাই, ১৬ জুলাই, ২৩ জুলাই এবং ৩০ জুলাই। দ্বিতীয় রুটের কিষাণ রেল আগরতলা থেকে চিৎপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে ১৬ জুন, ৩০ জুন, ৭ জুলাই, ১৪ জুলাই, ২১ জুলাই এবং ২৮ জুলাই৷
আগরতলা রেল স্টেশন থেকে নির্ধারিত দিনে কিষাণ রেল ছাড়বে ঠিক দুপুর ১টায়। পরে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পণ্যসামগ্রী লোডিংয়ের জন্য কিষাণ রেল থামবে আমবাসা, কুমারঘাট ও ধর্মনগর রেল স্টেশনে। আজ প্রথমদিনে শুধুমাত্র আগরতলা রেল স্টেশন থেকেই কৃষিজাত সামগ্রী লোডিং করা হয়৷