স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ মে।। আগরতলা পুর নিগম এলাকার কিছু কিছু অংশে গত কয়েকদিনে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিগম এলাকার ৫, ২১ এবং ৪৬ নং ওয়ার্ডকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা জানান।
কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মানুষের অসুবিধা হবে জেনেও উপয়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়েই পুর নিগম এলাকার তিনটি ওয়ার্ডকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করতে হয়েছে। এই আদেশ আগামীকাল ১৩ মে দুপুর ১২টা থেকে আগামী ২২ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। কনটেইনমেন্ট জোনের বাইরে দু’কিমি ব্যাসার্ধের এলাকা বাফার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কনটেইনমেন্ট এলাকায় বসবাসকারী প্রায় সাড়ে তিন হাজার গরীব পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ফুড প্যাকেট দেওয়া হবে। ৮ প্রকার সামগ্রীর এই ফুড প্যাকেটে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, আলু, পেঁয়াজ, সোয়াবিন, দুধ ও লবণের প্যাকেট থাকবে। প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড, অন্ত্যোদয় যোজনা, এ পি এল ভুক্তদের মধ্যে যারা গরীব অংশের রয়েছেন এবং কোনওরকম ক্যাটাগরি ভুক্ত নন এমন গরীব অংশের জনসাধারণকে এই ফুড প্যাকেট দেওয়া হবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অন্ত্যোদয় যোজনা বা অন্য ক্যাটাগরিতে যারা বিনামূল্যে চাল পাচ্ছেন তারা চাল ছাড়া বাদবাকি সমস্ত সামগ্রীই পাবেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, গরীব অংশের কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। তিনটি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৩১,৫৬৪ জন। এরফলে প্রায় ৫০ শতাংশ লোকই বিনামূল্যে এইসব সামগ্রী পাবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, কনটেইনমেন্ট জোন এলাকায় সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্রোসারি দোকান খোলা থাকবে। প্রশাসনের নিয়ম মেনে মাছ, সব্জি এবং দুধের ভেন্ডাররা ঐ এলাকায় যাবেন। তিনি বলেন, জনগণের সার্বিক সচেতনতা ও সহযোগিতা ছাড়া সরকারের একার পক্ষে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, কনটেইনমেন্ট জোন এলাকায় স্বাস্থ্য, আরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনও ধরনের যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কনটেইনমেন্ট জোন এলাকায় বসবাসকারী সকলকেই মাস্ক পরিধান করে থাকতে হবে। কনটেইনমেন্ট জোন এলাকায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েতও নিষিদ্ধ থাকবে। শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, রাজ্যে ১৫,১৫০টি কোভ্যাক্সিন টিকা এসে পৌঁছেছে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে টিকাকরণ প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে। তবে এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে রিক্সা চালক, অটো চালক, সাংবাদিক, উচ্চ আদালতের কর্মী, বিদ্যুৎ, খাদ্য, ব্যাঙ্ক এবং এয়ার ট্রাফিকের কর্মীদের।
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার কোভিড মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। সে বিষয়ে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে বর্তমানে ২২১টি শয্যা রয়েছে। ২টি মেডিক্যাল কলেজে ১২০টি শয্যা এবং আই জি এম হাসপাতালে ১০০টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ৭টি ডেডিকেটেড কোভিড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫০১টি এবং ১৯টি কোভিড কেয়ার সেন্টারে ১,৫৬৫টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আরও জানান, রাজ্যে বর্তমানে আইসোলেশন বেড রয়েছে ১,১৬৫টি, অক্সিজেন সাপোর্টেড বেড রয়েছে ৮৪৮টি, আই সি ইউ বেড রয়েছে ৬৮টি। রাজ্যে বর্তমানে ভেন্টিলেটর রয়েছে ৯৭টি। অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে ৬১টি। এছাড়াও কোভিড মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, আজ মোট ৫,৩৮৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে টেস্ট করা হয়েছে। এরমধ্যে পজিটিভ পাওয়া যায় ৪১৬ জনের এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার কোভিড মোকাবিলায় টেস্টিং এবং টিকাকরণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে মোট ১৪ লক্ষ ২১ হাজার ২৮০টি টিকাকরণ করা হয়েছে।