স্টাফ রিপোর্টার, সাব্রুম, ৮ মে।। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার মনুবাজার থানা এলাকার পূর্ব টাক্কা তুলসি এডিসি ভিলেজের দেবেন্দ্র পাড়াতে এক দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপজাতি গৃহবধূ ও তার স্বামীর মৃতদেহ শ্বশুরবাড়িতে বিছানা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানিয়েছেন জামাতার মৃতদেহ গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল । অবশ্য পুলিশ ও গ্রামবাসি এসে দেখতে পায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের মৃতদেহ বিছানাতে । তাদের শরীরে নেই কোনো আঘাতের চিহ্ন। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে এটি খুন না আত্মহত্যা। এই নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে । ঘটনাটি ঘটেছে সব্রুম মহাকুমার মনু বাজার থানার অন্তর্গত পূর্ব টাক্কা তুলসি এডিসি ভিলেজের দেবেন্দ্র পাড়াতে।
কালাঢেপা এডিসি ভিলেজের বিপিন সর্দার পাড়ার বাসিন্দা বীরমোহন ত্রিপুরার ছেলে অরুন ত্রিপুরার(২৮) সঙ্গে পূর্ব টাক্কা তুলসী এডিসি ভিলেজের দেবেন্দ্র পাড়ার বাসিন্দা শম্ভু কুমার ত্রিপুরার মেয়ে সবিতা ত্রিপুরার (২১)গত তিন বছর আগে বিয়ে হয়। সবিতা ত্রিপুরা গত ২ দিন আগে তার স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসে। শনিবার ভোর বেলায় মৃত সবিতা ত্রিপুরার বাপের বাড়ির ঘরের মধ্যে বিছানাতে সবিতা ত্রিপুরা মৃতদেহ এবং স্বামী অরুণ ত্রিপুরার মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় গাছের মধ্যে দেখতে পায় মৃত সবিতা ত্রিপুরার পরিবারের লোকজনরা ।
এমনটাই জানিয়েছেন মৃতার বাবা শম্ভু কুমার ত্রিপুরা। কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে বাড়ির মালিক বিস্তারিত কিছুই জানেন না বলে জানান। তাতে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকার লোকজন ছুটে আসে। এলাকার লোকজনরা এরকম দৃশ্য দেখতে পেয়ে মনু বাজার থানায় খবর দেন। মনুবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ।
অন্যদিকে মৃত অরুণ ত্রিপুরার বাবা, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনরা শম্ভু কুমার ত্রিপুরার বাড়িতে ছুটে আসেন। মনু বাজার থানার পুলিশ তাদের শরীরে কোনরকম আঘাতের চিহ্ন নেই। এ নিয়ে পুলিশ একপ্রকার হতবাক হয়ে হয়ে পড়ে। এলাকার লোকজনদের মধ্যে গুঞ্জন উঠতে শুরু হয় মৃত অরুণ ত্রিপুরার ঝুলন্ত মৃতদেহটি কাউকে না জানিয়ে কেন বিছানায় নিয়ে আসা হলো।
আরো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যদি মৃতদেহটি ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিয়ে আসা হয় তাহলে সেই মৃতদেহটিকে কি করে বিছানার সামনের অংশে না রেখে বিপরীত অংশে রাখা হয়েছে । মৃতদেহটি সামনের অংশে থাকায় তা নিয়ে এলাকার জনগণের ও পুলিশের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে। যদি মৃত দেহটি বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয় তাহলে সেই মৃতদেহটিকে সামনের অংশে থাকার কথা ।
এ নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।মৃত অরুণ ত্রিপুরার ভাই ও বাবা অভিযোগ করেন ভাই ও বৌদির মধ্যে কোনরকম ঝগড়া-বিবাদ ছিল না । তাদের মূল অভিযোগ মৃত অরুণ ত্রিপুরা যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে তার মৃতদেহটি কি করে ঘরের বিছানায় আসে। তাও আবার বিছানার বিপরীত পাশে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃত অরুণ ত্রিপুরার ভাই ও এলাকার লোকজনরা।
তারা আরো জানান তাদের বিবাহিত জীবনের তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও কোনো সন্তান হচ্ছিল না ।এ নিয়ে আজ মৃত সবিতা ত্রিপুরার বাড়িতে পূজা দেওয়ার কথা ছিল।
গতকাল রাত্রিবেলায় পুজোর বাজার নিয়ে আসা হয় মৃত সবিতা ত্রিপুরার বাপের বাড়িতে। এব্যাপারে মনু বাজার থানার ওসি শিবু দের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ডগ স্কোয়াড ও ফরেনসিক এর টিম আসার পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।এখন দেখার বিষয় এই দুই দম্পতি আত্মহত্যা করেছে, না খুন হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কালাঢেপা এডিসি ভিলেজ ও টাক্কা তুলসী এডিসি ভিলেজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।