স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৩০ এপ্রিল।। সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলে স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে নৃশংসভাবে খুনের
চেষ্টায় দোষি সাব্যস্ত বাবুল শুক্লবৈদ্য ওরফে বাবলুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল পশ্চিম জেলার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট (কোর্ট নং-৫) তথা অতিরিক্ত দায়রা জজ ধীমান দেববর্মা৷ আসামি বাবুল করিমগঞ্জের বাসিন্দা৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বছর ত্রিশের সুন্দরী মহিলা লাকি দেব’র সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলে৷ লাকি দেব’র সঙ্গে তার স্বামীর বনিবনা না থাকায় তিনি তার আট বছরের পুত্র সন্তানকে নিয়ে কলেজটিলা ভাড়া বাড়িতে থাকতেন৷ আসামি বাবুল’র সঙ্গে বেশ কিছুদিন ফেসবুকে সম্পর্কের পর মহিলা বুঝতে পারেন যে খুব একটা সুবিধার লোক নয় বাবুল৷ তাই লাকি দেব এই সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যান এবং বাবুল’র সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন৷
কিন্তু ধুরন্ধর প্রকৃতির বাবুল আগেই মহিলার কাছ থেকে বাসার ঠিকানা সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি জেনে নিয়েছিল৷ সেই মোতাবেক আসামি বাবুল ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মহিলার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়৷ মহিলা যে বাড়িতে থাকতেন মালিক না থাকলেও আরও ভাড়াটিয়া থাকতেন৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই রাতে বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা ছিলেন না৷
আসামিকে মহিলা বাড়ি ছেড়ে চলে যেেত বললেও খালি বাড়ির সুযোগ নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে সে লাকি দেব’র ঘরে ঢুকে৷ পরে তাদের মধ্যে শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়৷ পরিস্থিতি এক সময়ে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে আসামি রান্নাঘর থেকে দা এনে ছেলের সামনে লাকি দেবকে এলোপাতাড়ি কোপায়৷ ছেলেটি তার মাকে বাঁচাতে চিৎকার- চেঁচামেচি শুরু করলে মাত্র আট বছরের এই শিশুটিকেও দা দিয়ে কোপায় বাবুল৷
পরে দু’জনকেই রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় ঘরের ভিতরে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় সে৷ তবে তার জামাকাপড়ে রক্তের দাগ বা চিহ্ণ দেখতে পেয়ে শহরবাসী ওই রাতেই তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ অন্যদিকে গুরুতর আহত লাকি দেব’র জ্ঞান ফিরলে পথ চলতি মানুষের সহায়তায় হাসপাতালে পৌঁছান৷ যেখানে মা ও ছেলেকে ২ সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছিল৷
পরে লাকি দেব’র অভিযোগমূলে মহিলা পুলিশ অফিসার মীনা দেববর্মা ঘটনার তদন্ত শেষ করে আসামির বিরুদ্ধে আইপিসি’র ৩০৭ ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন৷ বিচার চলাকালে প্রসিকিউশনের তরফে মোট ১৭ জন সাক্ষি আদালতে বয়ান দেন৷ কোভিড পরিস্থিতির কারণে কিছুটা দেরিতে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে উক্ত আদালত শুক্রবার আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম সাজা ঘোষণা করেন৷
পাশাপাশি ভিক্টিম কম্পেনসেশন ফান্ড থেকে নির্যাতিতা মহিলাকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য পশ্চিম জেলা আইনসেবা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে উক্ত আদালত বলে জানিয়েছেন সরকার পক্ষের এডিশনাল পিপি অরবিন্দ দেব৷