স্টাফ রিপোর্টার, শান্তিরবাজার, ২৭ এপ্রিল।। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে রোগী অথবা চিতা জ্বালানোর জায়গা না পেয়ে লোকালয়েই তুলে আনতে হয়েছে শ্মশান। এ ধরনের শত শত খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে। এমন থমথমে পরিবেশের মধ্যেও মধ্য দিল্লিতে ঝড়ের গতিতে দৌড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ এবং সংসদ ভবন চত্বরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প।
করোনার প্রকোপে যাতে কাজ থমকে না যায়, তার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মতোই এ প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দিল্লি। এই মুহূর্তে ২০ হাজারেরও বেশি দৈনিক সংক্রমণ ধরা পড়ছে। দৈনিক মৃত্যু রয়েছে ৪০০-র আশেপাশে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার। জরুরি পরিষেবার বাইরে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে সেখানে। কিন্তু থেমে নেই সংসদ ভবন প্রকল্পের কাজ। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ স্থপতি স্যার এডউইন লুটিয়েন্সের নকশা অনুযায়ী দিল্লিতে যে প্রশাসনিক স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল, সংসদ ভবনও তার মধ্যে পড়ে।
সেই ‘লুটিয়েন্স দিল্লি’রই ভোলবদল করতে উদ্যত হয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। নতুন সংসদ ভবন-সহ ঐতিহ্যবহনকারী সমস্ত সরকারি ভবনগুলোকে সেখানে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তার জন্য ২০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয় ২০১৯ সালে। করোনা না থাকলেও কাছাকাছি সময়ে নোটবন্দি, জিএসটি নীতির ধাক্কায় ভারতে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কালো ছায়া নেমে এসেছিল।
সেই পরিস্থিতিতে খামোকা নতুন করে সংসদ ভবন নির্মাণের প্রয়োজন পড়ল কেন, রাজনীতির অন্দর থেকেই প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করে। এখন করোনা পরিস্থিতিতেও বিপুল টাকা খরচ করে সংসদ ভবনের নির্মাণের মতো ‘বিলাসিতা’ সরকারের সাজে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। সেই প্রসঙ্গে কংগ্রেস সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধি টুইটারে লেখেন, ‘কভিড সঙ্কট, নমুনা পরীক্ষা নেই, টিকা নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ নেই…এই পরিস্থিতিতেও সরকারের কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!’ যুব কংগ্রেস নেতা শ্রীনিবাস বি ভি টুইট করেন, ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি রুপি খরচ হচ্ছে। ওই টাকায় যদি ভেন্টিলেটর অথবা আইসিইউ শয্যা কেনা যেত, তাহলে আজ লাখ লাখ ভারতীয় অন্তত বেঁচে থাকতেন। আফসোস এই যে, যারা নীতি-নিয়ম তৈরি করছেন, তাদের কাছে মানুষের জীবনের থেকে বিলাসিতার মূল্য অনেক বেশি।’ ১৬ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি জারি করে গোটা নির্মাণকার্যকেই জরুরি পরিষেবার আওতায় আনা হয়। তার আওতায় ১৮০টি গাড়িকে লকডাউন থেকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে।