অনলাইন ডেস্ক, ২০ এপ্রিল।। রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি কারাগারে আটক অবস্থায় মারা গেলে মস্কোকে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নাভালনির এক সহযোগী জানিয়েছে, তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে সুখবর পাওয়ার কোনো আশা নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নাভালনি (৪৪) রাশিয়ার একজন সুপরিচিত ও জনপ্রিয় বিরোধী নেতা। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। নাভালনি বর্তমানে রাশিয়ায় কারাগারে আছেন। তিনি গত ৩১ মার্চ থেকে কারাগারে অনশন করছেন।
পিঠে তীব্র ব্যথা ও পায়ের অসাড়তার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তিনি কারাগারে অনশন শুরু করেন। অর্থ আত্মসাতের পুরোনো মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে নাভালনিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন নাভালনি।
নাভালনির পরিবার, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সহযোগীরা বলছেন, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না। তিনি দিন কয়েকের মধ্যে মারা যেতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। নাভালনির চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তার মেয়ে।
নাভালনির সহযোগী লুবভ সোবোল সোমবার রাশিয়ার একটি রেডিওকে জানান, তার (নাভালনি) সবশেষ অবস্থা কী, তা তারা জানেন না। কারণ, তার সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তারা আশা করছেন, মঙ্গলবার কোনো খবর পাবেন। কিন্তু তারা নাভালনির বিষয়ে খারাপ খবর পাওয়ার বিষয়ে খুবই ভীত।
নাভালনির স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গতকাল রোববার বলেছেন, নাভালনির বিষয়ে ক্রেমলিনকে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন।
জো বাইডেন সরকার রাশিয়াকে বলে দিয়েছে যে নাভালনি যদি কারাগারে মারা যান, তাহলে তার জন্য মস্কোকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। তার মৃত্যু হলে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নও গতকাল নাভালনির বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
নাভালনি গত বছরের আগস্টে প্রায় মরতে বসেছিলেন। সে সময় তিনি সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফিরছিলেন। যাত্রাপথে উড়োজাহাজেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে।
সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন।
বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরে জার্মানি জানায়, নাভালনিকে রাশিয়ান নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরে অন্য দেশের বিশেষজ্ঞরাও একই কথা বলেন।
বিষ প্রয়োগের জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করেন নাভালনি। তবে পুতিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানে ক্রেমলিন কর্ণপাত করেনি।
ক্রেমলিনের হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।