গতকাল টিকা স্থগিতের মিছিলে যোগ দিয়েছে সুইডেন। ইন্দোনেশিয়া ও কঙ্গোও যোগ দিয়েছে স্থগিতের তালিকায়। ভেনিজুয়েলা সোমবার ঘোষণা করেছে যে, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অনুমোদন করবে না, কারণ তিনটি বৃহত্তম ইউরোপীয় দেশ তাদের জবটির স্থগিতাদেশ স্থগিত করেছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রড্রিগেজ পাবলিক টেলিভিশনে বলেছেন, ‘ভেনিজুয়েলা জটিলতাজনিত কারণে আমাদের জনগণকে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়াতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেবে না’। কিন্তু বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক এবং ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ভ্যাকসিনের প্রয়োগ বন্ধ করার কোনও কারণ নেই এবং স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী নিকোলা স্টারজন বলেছেন যে, ডাকা হলে তিনি তার জাবটিকে ‘বিনা দ্বিধায়’ গ্রহণ করবেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের চিফ মেডিকেল অফিসার ড. মাইকেল ম্যাকব্রাইড সোমবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করে লোকেদের জাবের প্রতি আস্থা বজায় রাখার আহŸান জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ভ্যাকসিন নেননি এমন মানুষদের তুলনায় ভ্যাকসিন গ্রহণকারী মানুষদের মধ্যে যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা বেশি ঘটছে এমনটা নয়।
মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধে এবং এ ধরনের ঘটনায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রশ্নটা হলো, ভ্যাকসিনের সঙ্গে আসলে এ ধরনের মৃত্যুর সংযোগ আছে কিনা তা দেখা।’ এদিকে, থাইল্যান্ডে স্থগিত হওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কার্যক্রম গতকাল থেকে আবার শুরু হয়েছে। আর শঙ্কা উড়িয়ে এদিন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ভ্যাকসিন নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা। প্রধানমন্ত্রীসহ থাই মন্ত্রিসভার সদস্যদের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার কথা ছিল গত শুক্রবার। তবে নাগরিকদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধাসহ বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়ে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এই টিকা কার্যক্রম স্থগিত করলে থাইল্যান্ডও তা অনুসরণ করে।
গত সোমবার জানানো হয়, মঙ্গলবার থেকে আবার টিকা কর্মসূচি শুরু হবে। গতকাল টিকা নেওয়ার আগে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ আমি সাধারণ মানুষের মনোবল ও বিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছি।’ এরপরই নিজের বাম বাহুতে টিকা নেন তিনি। এ মাসেই ৬৭ বছরে পা দেবেন প্রায়ুথ চান ওচা। টিকা নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ভালো বোধ করছেন বলেও জানান তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইএমএ কী বলছে? রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সোমবার সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনাগুলো ভ্যাকসিন দেয়ার কারণে হয়েছে এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে সে সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন নিশ্চিত তথ্য ও প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথে জনগণকে জানিয়ে দেবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ড্রাগ নিয়ন্ত্রক পুনরাবৃত্তি করেছে যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি কোভিড ভ্যাকসিনের উপকারিতা ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি, কারণ তারা ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশগুলোতে শট স্থগিতের পরে সুরক্ষার তথ্যগুলি দ্রæত পর্যালোচনা করে। ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সির নির্বাহী পরিচালক ইমার কুক গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আপনি লাখ লাখ লোককে টিকা দেওয়ার সময় এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়’। ‘টিকা দেওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই’।ইউরোপের ওষুধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইএমএ’ও এ মুহূর্তে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা পর্যালোচনা করছে। সংস্থাটি বলছে, টিকা প্রদান চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
ইএমএ আরো বলছে, টিকার উপকারিতার তুলনায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঘটনা এখনো অনেক কম। যুক্তরাজ্যের ওষুধ বিষয়ক সংস্থা বলছে, ভ্যাকসিন দেয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে, সে বিষয়ে প্রমাণ মেলেনি এবং দেশটির নাগরিকদের যথাসময়ে টিকা দেয়ার আহŸান জানিয়েছে সংস্থাটি।অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কী বলছে? অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, টিকা দেয়ার ফলে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এমন কোন প্রমাণ নেই। সংস্থাটি বলছে, পুরো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্য মিলে যারা টিকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস ডিভিটি-মানে শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মোট ১৫টি ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া পালমোনারি এম্বোলিজম-মানে যেখানে জমাট বাঁধা রক্তের কণিকা ফুসফুসে চলে যাবার ২২টি ঘটনা ঘটেছে। এ মুহূর্তে ফাইজার বায়োএনটেকের টিকা পৃথিবীর ৭০টি দেশে দেয়া হচ্ছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে ৬৫টি দেশে। মর্ডানার টিকা দেয়া হচ্ছে ৩২টি দেশে এবং সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে ১৯টি দেশে। এছাড়া রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ১৭টি দেশে, চীনের সিনোভ্যাক ১১টি দেশে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্ব্য সচিব মো. আবদুল মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘বাংলাদেশে আমরা টিকা স্থগিতের মতো কোন সিদ্ধান্ত পৌঁছেনি।
যে পাঁচ-ছয়টি বা সাতটি দেশে তারা বন্ধ করেছে, তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সেটা করেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা অন্য দেশগুলো থেকে লিখিতভাবে কোন বারণ করেনি’। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা অন্য দেশগুলো থেকে লিখিতভাবে কোন বারণ করেনি’। ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় যেসব উপাদান রয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। যেহেতু সম্পর্ক নেই, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে এ কার্যক্রম বন্ধ করতে পারি না। ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় যেসব উপাদান রয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।
যেহেতু সম্পর্ক নেই, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে এ কার্যক্রম বন্ধ করতে পারি না। কারণ বাংলাদেশের মতো দেশগুলো শতভাগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে চলেছে’ -বলেন স্বাস্থ্য সচিব। ‘অক্সফোর্ডের যে টিকা আমরা নিয়ে এসেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বলে যে, এটা দেয়া যাবে না, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে যদি তারা আমাদের চিঠি দেয়, তাহলে তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা অপেক্ষায় আছি’ বলছেন জনাব মান্নান।