স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ মার্চ।। কোনও রাজ্যের উন্নয়নের সূচক সাধারণত স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয়৷ ছো- রাজ্য ত্রিপুরা এই সকল ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নের দিশায় দ্রত গতিতে চলছে৷ যার সুুফলগুলি রাজ্যের গ্রাম-শহর সকল অংশের জনগণ উপভোগ করতে পারছেন৷ আজ টাউনহলে স্বাস্থ্য দপ্তরের ৫টি কর্মসূচির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী যে ৫টি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সেগুলি হল- মুখ্যমন্ত্রী মিশন দৃষ্টি, আগরতলা পুরনিগম এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সাবসেন্টার স্থাপন, আশাকর্মীদের মার্টফোন প্রদান, এ এন এম কর্মীদের অনমোল ট্যাবলেট প্রদান এবং কিশোরী সূচিতা অভিযান৷
উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার গত তিন বছর ধরে জনগণের কল্যাণে যে সমস্ত কর্মসূচি রূপায়ণ করেছে সেগুলি মডেল ত্রিপুরা গড়ার উদাহরণ হিসেবে স্থাপন করেছে৷ গত ৯ মার্চ সরকারের ৩ বছর পূর্তিকালে রাজ্যের জনগণের সামনে মডেল ত্রিপুরার ভিতগুলি তুলে ধরা হয়েছে৷ কারণ বর্তমান রাজ্য সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যকে হীরা বানানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার তিন বছরের মধ্যে রাজ্যকে হীরা প্লাস বানিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ রাজ্যের জনগণকে এখন বিভিন্ন সুুবিধা পাওয়ার জন্য কোনও ধরণের আন্দোলন করতে হয়না৷ বিগত দিনে দেখা গেছে ত্রিপুরাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছিল৷
ত্রিপুরার জনগণের মধ্যে যে পারদর্শিতা এবং কাজ করার মানসিকতা ছিল তা দাবিয়ে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার প্রধানমন্ত্রীজির সবকা সাথ সবকা বিকাশ ও সবকা বিশ্বাস এই মন্ত্রধারায় প্রভাবিত হয়ে রাজ্যের জনগণের সঠিক কল্যাণে কাজ করছে৷ যারা ভালো কাজ করছে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্য সরকার রাজ্যকে স্বাস্থ্য, শিল্প, শিক্ষা, যোগাযোগ সহ প্রতিক্ষেত্রেই দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে৷ টি বি রোগ নিরাময়ে ত্রিপুরা এখন ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথমস্থানে রয়েছে৷ আয়ুমান প্রকল্প রূপায়ণেও ত্রিপুরা উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে৷ তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার গত তিন বছরে রাজ্যের ২৪.৬ শতাংশ পরিবারে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু দেখা গেছে বিগত সরকার তাদের ৩৫ বছরের সময়কালে মাত্র ২.৫ শতাংশ পরিবারে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছিল৷ শুধু তাই নয় বিগত সরকারের আমলে রাজ্য সরকার অধিগৃহীত সংস্থাগুলিকে অলাভজনক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছিল৷
সেগুলিকে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি তৎকালীন সরকার৷ বর্তমান সরকারের ৩ বছরের সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন পি এস ইউ এবং সমবায় সমিতিগুলিকে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বর্তমানে ১৬ তলাবিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে এবং লাইট হাউস প্রকল্পে ১ বছরের মধ্যে এক হাজার ঘর তৈরী করা হবে৷ তিনি বলেন, আজ যে ৫টি কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলিও মডেল ত্রিপুরা গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম পদক্ষেপ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ হল তথ্য প্রযুক্তির যুগ৷ রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ বিভিন্ন বিষয়কে অনলাইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে৷ কাজে নিষ্ঠা ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করার জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷
https://www.facebook.com/bjpbiplab/videos/1148136652272898/
আজ যে সমস্ত কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলি রাজ্যের সমস্ত অংশের জনগণের নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রচার অভিযানের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আজকের দিনটি আগরতলাবাসীর জন্য নিশ্চয়ই ঐতিহাসিক দিন৷ কারণ আজ থেকে আগরতলা পুর নিগম এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সাব সেন্টার চালু করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য দপ্তর স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সমাজের শেষ প্রান্তের ব্যক্তির নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ করোনা অতিমারির সময়ও রাজ্যের চিকিৎসকগণ সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে৷ কোভিড টিকাকরণেও রাজ্য দেশের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে৷
স্বাগত ভাষণে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল বলেন, আগরতলা শহর এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও মজবত করার লক্ষ্যে আগরতলা পুর নিগমের প্রতিটি ওয়ার্ডে সাব সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে৷ এখন শারীরিক সমস্যার জন্য জনসাধারণকে জিবি ও আইজিএমে ছুটে যেতে হবে না এবং অতি সহজেই হাতের নাগালে নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করার নিশ্চিত সুুযোগ পাবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী মিশন দৃষ্টি প্রকল্পে বিপিএলভুক্ত চল্লিশোর্ধ ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫০০ জনকে বিনামূল্যে চশমা প্রদান করা হবে৷ স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এএনএম এবং সিএইচও-দের অনমোল ট্যাবলেট প্রদান করা হবে৷ আশাকর্মীদের কাজের সুুবিধার্থে তাদের মার্টফোন প্রদান করা হবে৷ তিনি আরও বলেন, কিশোরী সূচিতা অভিযানে রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ২৫২ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে সেনিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মেম্বার সেক্রেটারি ডা. কমল রিয়াং৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিষ দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা ডা. চিন্ময় বিশ্বাস৷