স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৮ ফেব্রুয়ারী।৷ জনজাতিগোষ্ঠীর সমাজপতিরা হলেন জনজাতি সমাজের ধারক এবং বাহক৷ সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রনী ভূমিকা নিয়ে থাকেন৷ তাঁদের প্রদর্শিত পথ ও চিরাচরিত প্রথা সমাজ জীবনকে সুুন্দর ভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে৷ তাই রাজ্যের জনজাতিগোষ্ঠীর সমাজপতিদের সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ জনজাতিগোষ্ঠীর প্রধান সমাজপতিদের জন্য সরকার মাসিক ২০০০ টাকা করে সান্মানিক ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
আজ আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে ত্রিপুর ক্ষত্রিয় সমাজের প্রধান সমাজপতিদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ তিনি বলেন, বিগত দিনে ভারতীয় কৃষ্টি-সংসৃকতি ও সভ্যতাকে বোঝার মতো সরকার এরাজ্যে ছিল না৷ কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের ছোট বড় সব জনজাতি গোষ্ঠীদের চিহিণত করে তাদের সম্মান জানানোর উদ্যোগ নেওয়ার ফলে আজ তাদের মধ্যে আনন্দ এবং উচ্ছাস সৃষ্টি হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজন্য আমলে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের শাসনকালে রাজ্যের ছোট ছোট জনজাতি গোষ্ঠীর সমাজপতিদের সম্মান জানানোর প্রথার কথা উল্লেখ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রথা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল৷ রাজ্যের সংস্কৃতিকে ধবংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছিল৷ কিন্তু জনজাতি গোষ্ঠীর সমাজপতিদের জন্য আজও তাদের কৃষ্টি ও সংসৃকতি অক্ষুন্ন রয়েছে৷ এরাই মাটির মানুষ৷ ত্রিপুরার মাটি এবং সংসৃকতিকে তাঁরা অনুভব করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার প্রতিষ্ঠার পর রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ বড়মুড়া পাহাড়ের নাম হাতাইকতর করা হয়েছে৷ আগরতলা বিমানবন্দরের নাম মহারাজা বীর বিক্রম মানিক্যের নামে নামাঙ্কিত করা হয়৷ মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্যের জন্মদিনকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে৷ গড়িয়া পূজায় দু’দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়৷
রাজ্যে বিভিন্ন জনজাতি অধ্যষিত এলাকায় একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে৷ এডিসি এলাকায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ সহ দীর্ঘ দিনের রিয়াং (ব) শরনার্থীদের অমানবিক পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে তাদের ত্রিপুরাতেই স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টির কথাও মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সাল থেকে এডিসি এলাকায় এইচ এস সি এল-এর যে সকল রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ অসম্পর্ণ রয়েছে, বর্তমান সরকার পুনরায় প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করে সেই সমস্ত রাস্তাগুলির নির্মাণ ও সংস্কার করবে৷ সম্পতি মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান৷
পাশাপাশি আরও প্রায় ২০০ কোটি টাকা এডিসি এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নে ব্যয় করা হবে৷ আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এডিসি এলাকার সমস্ত রাস্তাগুলিকে পাকারাস্তা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ পাশাপাশি অটল জলধারা মিশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের জলজীবন মিশনে প্রত্যেক জনজাতি পরিবারের ঘরে বিনামূল্যে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
জনজাতি এলাকায় বিদ্যৎ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গৃহ, উজ্জলা যোজনায় গ্যাস সংযোগ, বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরী করে দেওয়ার প্রকল্প রূপায়ণ করছে সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করে বলেন, রাজ্যের জনজাতি সম্পদায়ের মানুষ তাদের নিজস্ব কৃষ্টি-সংসৃকতি তুলে ধরে ত্রিপুরাকে শক্তিশালী রাজ্য রূপে গড়ে তোলার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের যে স্বপ ’এক ত্রিপুরা-শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’ গড়ার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নেবেন৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা, শান্তিকালী আশ্রমের মহারাজ স্বামী চিত্তরঞ্জন দেববর্মা, খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা, ত্রিপুরা ক্ষত্রিয় সমাজের সভাপতি পূর্ণচন্দ্র দেববর্মা প্রমুখ৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ড় শৈলেশ কুমার যাদব৷ অনুষ্ঠানে ত্রিপুর ক্ষত্রিয় সমাজের সমাজপতি পূর্ণচন্দ্র দেববর্মাকে সম্মাননা জানান মুখ্যমন্ত্রী৷