স্টাফ রিপোর্টার, সাব্রুম, ১৮ ফেব্রুয়ারী।। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যবাসীর উন্নয়নের দিশায় কাজ করছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ সবকা বিকাশ-এর লক্ষ্য নিয়েই বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করা হচ্ছে৷ আজ সাব্রুমের মেলারমাঠে পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷
তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যের উন্নয়নে অষ্টলক্ষী ঘোষণা দিয়ে লুক ইস্ট পলিসি গ্রহণ করে উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে সাব্রুমের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে৷ এখানে তৈরি করা হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু৷
স্পেশাল ইকোনমিক জোন, ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, লজিস্টিক হাব, রেলওয়ে ইয়ার্ড ইত্যাদি উন্নয়ন প্রকল্প৷ এই প্রকল্পগুলির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সম্ভব হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরাকে হিরা দিয়েছেন৷ এরফলে সাব্রুম আগামীদিনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহ দুয়ার হয়ে উঠবে৷ সাব্রুমের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ২ হাজার ৮০ কোটি ৭৮ লক্ষ ব্যয় করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কোথাও উন্নয়নের জন্য এত টাকা দেওয়া হয়নি৷ এর বাইরেও ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সাবমের রাস্তা, পয়ঃপ্রণালী, বিদ্যৎ সহ নানা পরিকাঠামোগত উন্নয়নে৷ তিনি বলেন, একদিকে কৃষকদের উন্নয়নে কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, কৃষকদের কাছ থেকে ধানক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষকদের ঘরে আয় বাড়ানো হচ্ছে৷
অন্যদিকে উজ্জলা যোজনায় রান্নার গ্যাস, সৌভাগ্য যোজনায় বিনামূল্যে বিদ্যৎ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ঘর তৈরি ইত্যাদি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষের আর্থিক উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় তৈরি হচ্ছে গ্রামীণ মানুষের জন্য যোগাযোগের রাস্তা৷ তিনি বলেন, গ্রামীণ মানুষ স্বনির্ভর হচ্ছে, আত্মনির্ভর হচ্ছে, জব ক্রিয়েটার হচ্ছে৷ এখন রাজ্যের আনারস এবং বাঁশের তৈরি জিনিস বিদেশে পাঠাচ্ছে রাজ্যের যুবকরা৷
আয়ুষ্মান ভারত, স্বাস্থ্যবীমা যোজনা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্কিম৷ ৩ হাজার ২৭ পরিবার সাব্রুমে উপকৃত হয়েছে এই বীমায়৷ ২০২২ সনের মধ্যে অটল জলধারা যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে সকল পরিবারে জল পৌঁছে দেওয়া হবে৷ নবম শ্রেণীতে পাঠরত সকল ছাত্রীকে বিনামূল্যে বাইসাইকেল দেওয়া হবে৷ সাব্রুমের ১,৫৫৮ জন কৃষক সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন৷ সাব্রুম মহকুমার ২ হাজার ২৪৬ জন বিভিন্ন সামাজিক ভাতা পাচ্ছেন৷ ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি, ৮২ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা৷
বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ৮৫৭ জন৷ ভাতার পরিমাণ ২ কোটি ৬০ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা৷ প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন ২৫৪ জন, ভাতার পরিমাণ ৭৭ লক্ষ ২২ হাজার টাকা৷ ত্রিপুরা গালর্স চাইল্ড ইনসেটিভ স্কিমে ৭৪৬ জন কন্যা উপকৃত হচ্ছেন৷ ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা৷ প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনায় ২,৮৪২ জন উপকৃত হচ্ছেন৷
এছাড়াও অন্যান্য পাচ্ছেন ৭৭৬ জন৷ তাতে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে৷ সাব্রুমে তৈরি হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মহকুমা হাসপাতাল৷ ব্যয় হবে ১৩ কোটি ৪১ হাজার টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ)-এর মাধ্যমে মাত্র ৩২ মাসে সাবমের ৯৪৮টি পরিবারকে বাসগৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে৷
এতে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, পূর্বতন রাজ্য সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনেক মৃত মানুষকে ভাতা দিত৷ বর্তমান সরকার সেগুলো কেটে গরিব মানুষকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷ এখন অপপ্রচার করা হচ্ছে বর্তমান রাজ্য সরকার ভাতা কেটে দিয়েছে৷
এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে চাঁদা কালচার হটিয়ে চাঁদামুক্ত ওয়ার্ক কালচার তৈরি হয়েছে৷
এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক শংকর রায়, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে৷
স্বাগত ভাষণ দেন সাবমের মহকুমা শাসক তড়িৎকান্তি চাকমা৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক, বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন, ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ব্যাংক লিমিঃ এর চেয়ারম্যান কমলকান্তি সেন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুুপার কুলবন্ত সিংহ প্রমুখ৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি কাকলি দাস দত্ত৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ দুপুরে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম মহকুমা সফর করেন৷ সফরকালে মুখ্যমন্ত্রী সাবমে পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সাবমে এসেই প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় নির্মিয়মান দৌলবাড়ি কাঁঠালছড়ি ভায়া শাস্ত্রী কলনী দুর্গানগর রাস্তার শিলান্যাস করেন৷ এই রাস্তা নির্মাণে ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৫৬লক্ষ টাকা৷ এরপর মুখ্যমন্ত্রী মনুবনকুলে কস্তুবা গান্ধী জনজাতি ছাত্রী নিবাসের দ্বারোদঘাটন করেন৷ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রী আবাস নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা৷ রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে এই জনজাতি ছাত্রী আবাসটি নির্মিত হয়৷
এরপর মুখ্যমন্ত্রী সাবম শহরের দার্জিলিং টিলায় একটি দ্বিতল নাইট শেলটার হাউসের দ্বারোদঘাটন করেন৷ ৪৬ শয্যা বিশিষ্ট এই শেলটার হাউস নির্মাণে ব্যয় করা হয় ১ কোটি ৯২ লক্ষ ৪ হাজার ৭৭ টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী সাবমের আমতলীতে একটি ওপেন জিমের উদ্বোধন করেন৷ এতে ব্যয় করা হয়েছে ১০ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৩৪ টাকা৷
এরপর বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সাবম মেলার মাঠে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী স্মৃতি মঞ্চের ফলক উন্মোচন করেন৷ স্পেশাল ডেভেলপমেন্ট স্কিমে ৭১ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৬৫ টাকা ব্যয় করা হয় এই মঞ্চ নির্মাণে৷ এরপর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মেলারমাঠে উদ্বোধনী সমাবেশে ভাষণ দেন৷