অনলাইন ডেস্ক, ১৩ ফেব্রুয়ারী।। হিমালয়ের কোলে একের পর এক বিপর্যয় ঘটে গেলও উত্তরাখণ্ডের রাইনি গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্কবার্তা কাজে আসেনি। সম্প্রতি চামোলি জেলায় হিমবাহের একাংশ ভেঙে যে বিপর্যয় হল, তা-ও এ কথা প্রমাণ করল। শনিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৮। নিখোঁজ ২০০-রও বেশি।
গত শতকের সাতের দশকে ‘চিপকো’ আন্দোলনের ধাত্রীভূমি বলে পরিচিত উত্তরাখণ্ডের অলকানন্দা উপত্যকার ওই গ্রামের লোকজন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যথেচ্ছ গাছ কাটা, যেখানে-সেখানে সেতু তৈরি, বাঁধ দেওয়া অথবা পর্যটকদের আনাগোনায় রাশ টানা না হলে বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে উত্তরাখণ্ড। সে সময় এই গ্রামের বাসিন্দাদের আন্দোলেনর চাপেই মূলত ১৯৮০ সালে বনআইন পাশ হয় সংসদে।
তার পর থেকে এই গ্রামের বাসিন্দারা লাগাতার প্রকৃতি ধ্বংস করার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। কিন্তু, তাঁদের কথায় কোনও হেলদোল হয়নি। উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক বিপর্যের পর ফের এক বার ওই সতর্কবার্তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।
হিমালয় উপত্যকায় এ ধরনের বিপর্যয় অবশ্য আগেও দেখেছেন রাইনি গ্রামের বাসিন্দারা। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথকে কার্যত ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল প্রাণঘাতী বন্যা। ওই হড়পা বানে নিহত হয়েছিলেন প্রায় ৬ হাজার। রাজ্য প্রশাসনের তরফে তাকে ‘হিমালয়ের সুনামি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে হড়পা বান বা ধসের চিত্র পরিচিত হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনাহীন ভাবে পর পর বাঁধ নির্মাণ, তড়িঘড়ি সড়ক তৈরি করা, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ নির্মাণ বা নিকাশি ব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থার সঙ্গে হিমালয়ের কোলে পর্যটকদের বাড়বাড়ন্তের ফলে কেদারনাথের বিপর্যয় ঘটেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ কমিটি ওই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিল। কেদারনাথের বিপর্যয়ের ফলে বাঁধগুলিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল কি না, তা-ও তদন্তের ভার পড়েছিল কমিটির।
কমিটির তদন্তে প্রকাশ, বাঁধ নির্মাণর জন্য পাহাড়ের ধারে বড় বড় টানেল তৈরি করায় তা আসলে পাহাড়কেই দূর্বল করে দিয়েছিল। যার ফলে ধসের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল।