স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারী।। রাজ্যে ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের চার মাস আগে তড়িঘড়ি করে আগরতলা ও দিল্লির মধ্যে ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়েছিল৷ ভোটে জেতার তিন বছরের মধ্যেই অবশেষে তা তুলে নেওয়া হচ্ছে৷ ত্রিপুরা থেকে ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ তুলে নিয়ে পরিবর্তে চালানো হবে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ বেসরকারি সংস্থা আইআরসিটিসি-র ট্রেন ‘তেজস এক্সপ্রেস’৷
গত সোমবারই আগরতলা থেকে শেষবারের মতো দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় রাজধানী এক্সপ্রেস এবং আজ তথা শুক্রবার দিল্লি থেকে শেষবারের মতো আগরতলায় আসবে রাজধানী এক্সপ্রেস৷ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আগরতলা ও দিল্লির মধ্যে নিয়মিতভাবে চলাচল করবে তেজস এক্সপ্রেস৷ আগরতলা-আনন্দবিহার রাজধানী এক্সপ্রেসের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই চলবে এই বেসরকারি ট্রেন৷
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত এরকমই খবর রয়েছে আগরতলা রেল স্টেশনে৷ স্টেশন ম্যানেজার কৃষ্ণা চন্দ্রা কুমার নিজে এই খবর জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলও ত্রিপুরা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসকে বিদায় জানিয়ে তেজস এক্সপ্রেসকে স্বাগত জানাতে সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখে৷
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সিনিয়র জনসংযোগ আধিকারিক নৃপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, আপাতত ত্রিপুরা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস তুলে নিয়ে তেজস এক্সপ্রেস চালানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে৷ অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই এই রুটে চলছে না তেজস এক্সপ্রেস৷ পরিবর্তে চলবে রাজধানী স্পেশাল এক্সপ্রেস এবং আগের সূচি অনুযায়ীই৷
তবে একই সঙ্গে তিনি এটাও জানান, আগরতলা ও দিল্লি রুটে রাজধানী এক্সপ্রেসের পরিবর্তে বেসরকারি সংস্থার ‘তেজস এক্সপ্রেস’ চালানোর পথেই হাঁটছে ভারতীয় রেল৷ ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ট্রেনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজধানী এক্সপ্রেস৷ দেশের রাজধানী নতুন দিল্লি ও অঙ্গ রাজ্যগুলোর রাজধানীর মধ্যে সরাসরি চলাচল করে এই ট্রেন৷
ত্রিপুরায় গত বিধানসভা ভোটের চার মাস আগে অর্থাৎ ২০১৭-র ২৮ অক্টোবর আগরতলা- আনন্দবিহার রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়েছিল বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে৷ তৎকালীন রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই আগরতরা রেল স্টেশেন রাজধানী এক্সপ্রেসের ফ্ল্যাগ অফ করেছিলেন৷ সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল তথাগত রায় এবং রাজ্যের তৎকালীন দুই মন্ত্রী মানিক দে ও বাদল চৌধুরী৷
অন্যদিকে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো মর্যাদাসম্পন্ন ট্রেন তুলে নিয়ে ওই জায়গায় কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনস্থ সংস্থা আইআরটিসি বেসরকারি ট্রেন চালানো নিয়ে প্রশ্ণ উঠেছে৷ কারণ বেসরকারি হওয়ায় ভাড়াও বেশি৷ আইআরসিটিসি-র এই বেসরকারি ট্রেন ২০১৭-র ২৪ মে থেকে পর্যায়ক্রমে চালু হয় দেশের চার জায়গায়৷
মুম্বাই-কারমালি, চেন্নাই-মাদুরাই, লক্ষ্নৌ-নিউ দিল্লি এবং আহমেদাবাদ-মুম্বাই রুটে৷ কিন্তু ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রীর অভাবে ডাহা ফেল করে এই প্রয়াস৷ তাতে দু’তিন বছরের মধ্যেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় একাধিক জায়গায়৷ সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনই ত্রিপুরায় চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তাও রাজধানী এক্সপ্রেস তুলে নিয়ে!
এমনিতেই আগরতলা-ব্যাঙ্গালুরু হামসফর এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় বিশেষত দরিদ্র অংশের রেল যাত্রীদের সফর করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ এবার আগরতলা-দিল্লি রুটেও বেশি ভাড়ার বেসরকারি ট্রেন চালানো হলে সমস্যা যে আরও বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
তবে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, আগরতলা- দিল্লি রুটে রাজধানী এক্সপ্রেস তুলে নিয়ে ‘তেজস’ চালানোর সিদ্ধান্ত বিশেষ কারণে আপাতত স্থগিত রাখা হলেও খুব শীঘ্রই তা কার্যকর হতে চলেছে৷ সময়ের অপেক্ষা মাত্র৷