স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১১ ফেব্রুয়ারী।। অপরাধী যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন বিচার প্রক্রিয়া যদি সঠিকভাবে চালানো হয়, তবে অবশ্যই অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হয় এবং আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সেই অপরাধী তার কৃত অপরাধের জন্য সর্র্বেচ্চ সাজা পেতে পারে৷
বৃহস্পতিবার এমনই এক প্রভাবশালী অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা ও দায়রা আদালতের ৫নং কোর্টের বিচারক ধীমান দেববর্মা৷ এই রায়টি একদিকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা ও দায়রা আদালতের যুগান্তকারী রায় বলা যেতে পারে৷
তবে এই মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুক্রবার আদালত সাজা ঘোষণা করবে৷ মামলাটি ছিল ২০১৫ সালের৷ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করায় অভিযুক্ত সঞ্জীব পাল কে এদিন দোষী সাব্যস্ত করলেন পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক ধীমান দেববর্মা৷
শুক্রবার তার সাজা ঘোষণা হবে৷রাজ্যের আদালতে এটি বিরলতম রায় বলেই মনে করছেন আইনজীবী মহল৷ মামলার রায়ে সঞ্জীব পাল দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন সরকারি আইন জীবী অরবিন্দ দেব৷তিনি বলেন ২০১৩ সালে আমতলী থানা এলাকার যুবক সঞ্জীব পাল তার বাড়ি এলাকারই এক যুবতীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে৷
এই প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে প্রেমিকার সাথে একাধিকবার সহবাস করে৷ তাতে একসময় প্রেমিকা গর্ভবতী হয়ে যায়৷ গর্ভবতী হবার পর সেই যুবতী বারংবার সঞ্জীব পাল এর কাছে তাকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ জানায় কিন্তু সঞ্জীব পাল যুবতীর কাতর অনুরোধকে হেলায় অবজ্ঞা করে ৷
নিরুপায় হয়ে এক সময় ওই যুবতী সঞ্জীব পাল এর সাথে তার সম্পর্ক এবং তার গর্ভবতী হবার বিষয়টি তার পরিবারের অভিভাবকদের জানায়৷ দুই পরিবারের লোকজন বিষয়টি মিটিয়ে নিতে রাজী হলেও অভিযুক্ত সঞ্জীব পাল তাতে রাজী হয়নি৷ সে ওই গর্ভবতী যুবতীকে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি ছিল না৷ যুবতী সঞ্জীবের হাতে পায়ে ধরেও তাকে বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারেনি৷ এই ধরনের টানাপোড়েনের মধ্যেই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় যুবতী৷
তার আশা ছিল সন্তানের মুখ দেখে হয়তো সঞ্জীব পাল তাকে বিয়ে করবে৷ কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয় কুমারী মা৷ অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ২৯ জুন এই কুমারী মা আমতলী থানায় সঞ্জীব পালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন৷বিগত সরকারের সময়ে দীর্ঘ দিন মামলাটির শুনানি বন্ধ ছিল৷ নতুন এ পি পি অরবিন্দ দেব এসে এই মামলাটির ফাইল দেখে মামলাটি আবার রিওপেন করেন৷
কুমারী মা ও তার মাকে ডেকে কথা বলে বিষয়টি তিনি বিস্তারিত জেনে নেন৷ আইনজীবী অরবিন্দ দেবের প্রচেষ্টাতেই পশ্চিম ত্রিপুরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে এই মামলার পুনরায় শুনানি শুরু হয়৷এই মামলায় মোট এগার জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত৷ দীর্ঘ শুনানি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ভারতীয় দণ্ড বিধির ৩৭৬/৪১৭/৫০৬/৩৪ ধারায় আদালত সঞ্জীব পালকে দোষী সাব্যস্ত করে৷
মামলায় ফরেনসিক এভিডেন্স গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী অরবিন্দ দেব৷ এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ পি পি অরবিন্দ দেব আরও বলেন মামলায় আর ও তিন জন অভিযুক্ত ছিল৷ তারা হল সঞ্জয় পাল, শিল্পী দাস এবং রেখা পাল৷ উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে এবং প্রমাণ অভাবে তারা এই মামলা থেকে খালাস পেয়ে গেছে৷
আইনজীবী অরবিন্দ দেব জানিয়েছেন শুক্রবার সঞ্জীব পালের সাজা ঘোষণা হবে৷ এই মামলায় তিনি উনার সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন৷ এক্ষেত্রে সঞ্জীব পালের সর্র্বেচ্চ শাস্তি হবে বলেই তিনি মনে করছেন৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১৪- ১৫ সালে এই ধরনের বেশকিছু মামলার চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছিল৷
কিন্তু চার্জশিট জমা পড়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে এই মামলাগুলি আদালতে ঝুলে ছিল৷ রাজ্য সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর এই ঝুলে থাকা মামলাগুলির অনেকগুলি রি – ওপেন করা হয়েছে৷ বর্তমানে এই মামলাগুলির সাক্ষ্য বাক্য গ্রহণ করা সহ শুনানি চলছে আদালতে৷ আগামী তিন চার মাসের মধ্যে এই মামলা গুলির ফয়সালা হবে বলেও আদালত সূত্রে জানা গেছে৷