আজ সচিবলায়ের ২নং সভাকক্ষে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দপ্তরের কাজকর্মে সরকারের লক্ষ্য ও দিশার কথা ব্যক্ত করেন৷ সভায় প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়কালে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিতে এন্টারপ্রেনারশিপ উন্নয়ন হচ্ছে৷
প্রাণীপালন ও ডেয়ারি শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষের রোজগারের সুুযোগ বাড়াতে দপ্তরকে গ্রামস্তরে গিয়ে কাজ করতে হবে৷ ছোট ছোট উদ্যোগীদের অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে শিল্প স্থাপনে উৎসাহ প্রদানের পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি আরোও বলেন, বেসরকারীভাবে পশুপালন, ডেয়ারি, মৎস্যচাষ ইত্যাদি প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিতে সাফল্য অর্জন করেছে এমন উদ্যোগীদের ব্লকস্তরে ও জেলাস্তরে গিয়ে খঁজে বের করে দপ্তরকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে৷
পর্যালোচনা সভায় প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ কে শশীকুমার সর্বশেষ সভায় গৃহিত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন৷তিনি বলেন, রাজ্যে দুধ উৎপাদন ব’দ্ধির লক্ষ্যে দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ করছে৷২০২০-২১ অর্থবর্ষে সে’ সার্টেড সিমেন প্রযুক্তির মাধ্যমে ’ বাছুরের সংখ্যা ব’দ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
পশ্চিম ত্রিপুরা, ধলাই, খোয়াই, গোমতী, সিপাহীজলা এই ৫টি জেলায় মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৮৭টি ক’ত্রিম প্রজনন করা হয়েছে৷ দক্ষিণ ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা এবং ঊনকোটি জেলায়ও সে’ সর্টেড সিমেন প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যে ডেয়ারী শিল্পের উন্নয়নে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৫৭২ জন সুুবিধাভোগীকে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য ম’রী দেওয়া হয়েছে৷
রাজ্যের হালাহালি এবং খয়েরপুরে ২০০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি বাল্ক মিল্ক কুলার স্থাপন করা হয়েছে৷ প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা আরোও জানান, গোমতী কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার ইউনিয়ন লিমিটেডের অধীনে বর্তমানে রাজ্যে ১১৭টি ডেয়ারী কো-অপারেটিভ চালু রয়েছে৷ এছাড়াও ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর ডেয়ারী ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে গোমতী কো-অপারেটিভ রাজ্যে ১৩টি মিল্ক পার্লার স্থাপন করেছে৷
তিনি আরোও জানান, মাংস উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যে ২৬০টি বড়, ৩৪২টি মাঝারি এবং ৩১টি ছোট পিগারী ইউনিট চালু করা হয়েছে৷ এছাড়াও ৩২৭টি মাঝারি ছাগলের খামার এবং ৩৪টি ছাগল পালন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে৷ রাজ্যকে ডিম উৎপাদনে স্বয়ং সম্পর্ণ করার লক্ষ্যে ১০৬টি বড় এবং ৩২২৮টি ছোট পোল্টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে৷
এছাড়াও চলতি অর্থবর্ষে ১৬৭টি ছোট হাঁস খামার তৈরী করা হয়েছে এবং রুদিজলা প্রকল্পে আরোও ৬২৬০টি হাঁসের বাচ্চা বিতরণ করা হয়েছে৷ প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা সভায় আরোও জানান, লেয়ার ফার্মিং উন্নয়নের লক্ষ্য পুরাতন আগরতলার চম্পামুড়াতে ৮ হাজার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি নতুন পোলট্রি ফার্ম স্থাপন করা হয়েছে৷
বিশালগড়ে ১০ হাজার ক্ষমতা সম্পন্ন আরো একটি লেয়ার ফার্ম তৈরীর কাজ চলছে৷ এছাড়াও খয়েরপুরে প্রতিমাসে ১ লক্ষ ৮০ হাজার মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বড় আকারের হ্যাচারী স্থাপন করা হয়েছে৷ প্রাণী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দপ্তর ২০২০-২১ সালে ৯ লক্ষ ৮২ হাজার গবাদিপশুকে এবং ২৩ লক্ষ ২৫ হাজার পাখির টিকাকরণ করেছে৷
এছাড়াও চলতি অর্থবর্ষে ৩ লক্ষ ৩১ হাজার পশু-পাখির চিকিৎসা করা হয়েছে৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সুুযোগ সুুবিধা পর্যাপ্ত রয়েছে৷ এক্ষেত্রে উদ্যোগীদের পশুপালন, ডেয়ারী ও মৎস্যচাষ সহ প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিতে শিল্পস্থাপনে উদ্যোগীদের উৎসাহিত করতে হবে৷
ডেয়ারী শিল্প স্থাপনে রাজ্যের সমবায় সমিতিগুলিকেও সংযুক্ত করার প্রয়াস নিতে হবে৷ পাশাপাশি রাজ্যে দুধ ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পর্ণ করার লক্ষ্যে দপ্তরকে বিশেষ অভিযান শুরু করার জন্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পর্যালোচনা সভায় প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী শান্তনা চাকমা, মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের প্রধান সচিব শশীরঞ্জন কুমার, অর্থ দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷