স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ জানুয়ারি।। রাজ্যের সার্বিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন শিল্পে বিনিয়োগ৷ শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগে বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে রাজ্যের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে৷ রাজ্যে শিল্প স্থাপনে বেসরকারি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলিকে সরকার উৎসাহিত করছে৷ শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়াও অনেক সরলীকরণ করা হয়েছে৷
আজ হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে ৩১তম শিল্প বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন রাজ্যে নতুন নতুন ব্যাবসা, বাণিজ্য ও শিল্প স্থাপনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷
বর্তমান সরকারের মাত্র ৩২ মাসে ছোট ছোট বানিজ্য সংস্থা ত্রিপুরায় ১২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে৷ আরও নতুন নতুন সংস্থাকে ত্রিপুরায় শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসতে হবে৷ এই মেলা আগামী ১৫ ফেবয়ারি পর্যন্ত চলবে৷ এ বছর শিল্প ও বাণিজ্য মেলার থিম হচ্ছে ’বাঁশ-ত্রিপুরার সবুজ সোনা’৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, রাজ্য সরকার আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷ বেকারদের স্বরোজগারী করার লক্ষ্যে সরকার প্রধানমন্ত্রীর ভোক্যাল ফর লোকাল স্প্লোগান বাস্তবায়ন করছে৷ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দ্রব্যাদির সদ্ব্যবহার করে তার বাজারজাতকরার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ এতে রাজ্যের অন্য রাজ্যের উপর নির্ভর করে থাকা প্রবণতা কমবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করার ফলেই ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগম, ত্রিপুরা হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগম, ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ প্রভৃতি স্বশাসিত সংস্থা আজ লাভজনক সংস্থায় পরিণত হয়েছে৷ বিগত সরকার সে পথে হাঁটেনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকারের সময়ে রাজ্যে শিল্প ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ খুবই কম ছিল৷ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগে গুরুত্ব আরোপ করা হয়৷ এতে সুুফল পাওয়া যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ত্রিপুরা ভাল অবস্থানে রয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে পানীয়জলের সংযোগ রয়েছে ৫.৪৬ শতাংশ৷ ত্রিপুরায় বর্তমানে রয়েছে ২২ শতাংশ৷ জাতীয়স্তরে এই হার ১৬ শতাংশ৷ রাজ্য সরকার আগামী ২০২২ সালের মধ্যে অটল জলধারা মিশনে সব ঘরে পানীয়জল পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রাবার চাষ সম্পসারণে ও রাবার শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহায়তা চাওয়া হয়েছে৷
রাবার প্ল্যান্টেশনে উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলিতে ১,১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এর বেশির ভাগটাই বিনিয়োগ হবে ত্রিপুরায়৷ তিনি বলেন, সাবমের মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পথে৷ সাব্রুমে গড়ে উঠেছে সুুসংহত স্থল বন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও লজিস্টিক হাব৷ এসমস্ত পরিকাঠামো গড়ে উঠলে আগামীদিনে রাজ্যে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুুযোগ সৃষ্টি হবে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন সকলের সহযোগিতায় ত্রিপুরা আগামীদিনে শ্রেষ্ঠ রাজ্যে পরিণত হবে৷
সম্মানিত অতিথির ভাষণে ত্রিপুরায় নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সহকারি হাই কমিশনার মহঃ জবায়েদ হোসেন বলেন, দু’দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে মৌ স্বাক্ষর এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে৷ বিশেষ অতিথির ভাষণে বিধায়ক মিমি মজমদার বলেন, রাজ্যে শিল্পের প্রসারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার ভূমিকা রয়েছে৷
স্বাগত ভাষণে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায় বলেন, এই শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় সরকারি স্টল, আন্তর্জাতিক স্টল, বর্হিরাজ্যের স্টল ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মিলে মোট ৩১৪টি স্টল খোলা হয়েছে৷ প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অণুষ্ঠান৷ আশা করা যায় এবছর ১০ লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম হবে৷
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা, ত্রিপুরা ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, ত্রিপুরা হস্ততাঁত ও হস্তকারু উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বলাই গোস্বামী, ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা রাভেল হেমেন্দ্র কুমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিদের হাতে মারক উপহার তুলে দেওয়া হয়৷ তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের শিল্পীগণ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন৷ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব প্রশান্ত কুমার গোয়েল৷