ওড়িশার কন্ধমাল জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই মহিলাকে আধ্যাত্মিক গুরু বলে মানেন জেলার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পূর্ণমাসি তাদিসারু নামে পরিচিত। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও তিনটি ভাষায় পারদর্শী তিনি। আদিবাসী কুই ভাষা, সংস্কৃত ভাষা এবং ওড়িয়া ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন তিনি। লেখাপড়া না জানলেও সংস্কৃত ভাষায় তাঁর বিশেষ ব্যুৎপত্তি রয়েছে। ৫০ হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। তিনটি ভাষাতেই গান বেঁধেছেন। পূর্ণমাসি গান বাঁধেন আর তাঁর শিষ্যরা সেটাই লিখে রাখেন। বহু দূর দূরান্ত থেকে তার কাছে অনেকেই ছুটে আসেন একটু শান্তির জন্য।
জানা গিয়েছে, ১৯৪৪-এ কন্ধমাল জেলার ডালপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। ছোট থেকেই অপুষ্টিতে আক্রান্ত ছিলেন। খুব ছোট বয়সেই হয়েছিল বিয়ে। অপরিণত বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু একের পর এক সন্তানের জন্ম দিলেও কেউই বাঁচেনি। তাই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন পূর্ণমাসি। শেষ পর্যন্ত সংসার ছেড়ে স্বামীকে নিয়ে আধ্যাত্বিক পথে পা বাড়ান তিনি। ১৯৬৯-এ তাদিসারু নামে একটি পাহাড়ের উপর দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন তিনি। এরপরই তাঁর জীবন পাল্টে যায়। জনশ্রুতি পূর্ণমাসি কুই ভাষা ছাড়া কিছুই বলতে পারতেন না। কিন্তু তপস্যা সেরে ফেরার পর ওড়িয়া ও সংস্কৃত ভাষায় তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
এরপরই সমাজ ও সংসারের গূঢ় তত্ত্বকথা নিয়ে তিনি সংস্কৃত ভাষায় একের পর এক গান রচনা শুরু করেন। ভক্তি রসের আড়ালে তাঁর গানে সামাজিক অন্যায়-অবিচারের কথাও তুলে ধরেন তিনি। নারী ও শিশুদের সুরক্ষা, শিক্ষার কথা তুলে ধরেন গানের মাধ্যমে। তাঁর এই কাজকে স্বীকৃতি জানাতে ২০০৬-এ ওড়িয়া সাহিত্য আকাদেমি থেকে সম্মান জানানো হয় পূর্ণমাসিকে। ২০০৮-এ দক্ষিণ ওড়িয়া সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে। সামাজিক বৈষম্য মেটাতেও তিনি জেলায় উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছেন।
৭৭ বছরের এই নিরক্ষর মহিলা গত সাত দশক ধরে এলাকার গরিব ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। কন্ধমালের মতো একটি পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সমাজ সংস্কারের গুরু দায়িত্ব বহন করে চলেছেন পূর্ণমাসি। তাঁর সেই কাজকেই স্বীকৃতি জানাতে কেন্দ্র পদ্ম সম্মান দিল।