ত্রিপুরাকে সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে সরকার : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২০ জানুয়ারি।। রাজ্যের চিকিৎসকদের দৈনন্দিন নির্দিষ্ট কাজের পাশাপশি নূ্যনতম একঘন্টা সময় সমাজের অন্য পাঁচ জন ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় দিতে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এই যোগাযোগ ও সমন্বয় হয়তো ঐ ব্যক্তির জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য দিক হয়ে উঠবে৷ কারণ সমাজে চিকিৎসকদের গ্রহণযোগ্যতা অধিক এবং সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে৷ আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুুরক্ষা পরিষেবার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের এক পর্যালোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷

তিনি বলেন, রাজ্যের চিকিৎসকগণ যে-যেই জায়গায় কর্তব্যরত রয়েছেন সেখানকার পরিকাঠামোর মধ্যেই দক্ষতার সাথে কিভাবে সর্বোচ্চ পরিষেবা দেওয়া যায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের ধৈর্যশীল ভূমিকা প্রয়োজন৷ রোগী ও তার আত্মীয় পরিজনের কথা শোনা আবশ্যক৷ এর ফলে রোগীরা যেমন সন্তুষ্ট হবেন তেমনি চিকিৎসকদের পরিষেবার প্রতিও তাদের মনে সন্তুষ্টি আসবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গর্ভবতী মা ও শিশুরা সুুরক্ষিত থাকলেই রাজ্য বা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তৈরি হবে৷ তাই গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যু, শিশু মৃত্যু, রক্তাল্পতার হার হাস করার পাশাপাশি এইগুলি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ত্রিপুরার পরিচিতি বাড়বে৷

এই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজ্যের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও বেশি করে জনমুখী করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে৷ পাশাপাশি জেলা, মহকুমা হাসপাতাল সহ প্রাথমিক, সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজগুলি আরও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন৷ করোনা পরিস্থিতির সংকটকালে ১০ বছরের নীচে শিশু এবং ষাটোর্ধদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার যে প্রবণতা দেখা গেছে তার ধারাবাহিকতা আগামীদিনেও বজায় রাখার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷

তিনি আরও বলেন, রুটিন করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে মাস অনুসারে টিকাকরণ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলি গ্রহণ করতে হবে৷ তবেই এই স্বাস্থ্য কর্মসূচীগুলির সুুফল মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাবে৷ এক্ষেত্রে তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও সুুদৃঢ় করতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে প্রথমসারির নাগরিকদের মধ্যে চিকিৎসকগণ অন্যতম৷ চিকিৎসক সহ সমস্ত নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের কথা ভেবে সরকার রাজ্যে বিভিন্ন পরিকাঠামোর উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে৷ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন আবাসন নির্মাণ সহ অর্থনৈতিক পরিকাঠামো উন্নয়নে৷ আগরতলা সহ গোটা রাজ্যেকে আদর্শ রাজ্যে হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়ন কর্মযোগ্য অব্যাহত রয়েছে৷

সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো সকলকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরাকে সুুন্দর ও সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসেবে তুলতে চাইছে সরকার৷ পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিল্প ও বাণিজ্য প্রভ’তি ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হচ্ছে৷ পর্যালোচনা সভায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরা শাখার মিশন ডিরেক্টর ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়শওয়াল বলেন, চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করা দরকার৷ কারণ রোগীরা চিকিৎসকদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন৷ দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজনীয় জরুরী পরিষেবাগুলি কার্যকর রাখার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে সর্তকতামূলক সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তিনি আলোচনায় তুলে ধরেন৷

সভায় হেলথ সার্ভিস-দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা বলেন, রাজ্যের জেলা হাসপাতালগুলিকে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে৷ পাশাপাশি স্থানীয় এলাকার নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ সভায় পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ অধিকারের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসকরা অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ায় তিনি তাদের অভিনন্দন জানান৷ সভায় স্টেট সার্ভাইলেন্স অফিসার ডা. দীপ কুমার দেববর্মা রাজ্যে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং পরিষেবার দিকগুলি নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন৷

রাজ্যের ৮টি জেলার হেলথ সাবসেন্টার, হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টার, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পরিসংখ্যান তিনি সভায় তুলে ধরেন৷ একই সঙ্গে তিনি ২০১৭-১৮ সাল থেকে ২০২০-২১ সালের জেলাভিত্তিক ওপিডি, আইপিডি বিভাগে রোগীর সংখ্যা, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব, শিশু মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন৷ পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্য শিবিরের পরিসংখ্যান ও সভায় তুলে ধরা হয়৷ তাছাড়াও সভায় আলোচনায় আয়ুমান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় সুুবিধাভোগীদের মধ্যে ই-কার্ড বিতরণের বিষয়টিও প্রাধান্য পায়৷

পর্যালোচনা সভায় রাজ্যের ৮ জেলার চিফ মেডিকেল অফিসারগণ তাদের জেলাস্তরের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও পরিষেবা, ও পি ডি, আই পি ডি বিভাগে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা, শিশু মৃত্যু, স্বাস্থ্য শিবির আয়ুমান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা সম্পর্কে তথ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন৷ পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে অবহিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যাগুলি নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেন৷

সভায় রাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে তাদের অভিমত প্রকাশ করেন৷ সভায় রাজ্যের ৮টি জেলার সি এম ও, মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসাবে রাজ্যের ৮টি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের হাতে মারক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?