তিনি বলেন, রাজ্যের চিকিৎসকগণ যে-যেই জায়গায় কর্তব্যরত রয়েছেন সেখানকার পরিকাঠামোর মধ্যেই দক্ষতার সাথে কিভাবে সর্বোচ্চ পরিষেবা দেওয়া যায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের ধৈর্যশীল ভূমিকা প্রয়োজন৷ রোগী ও তার আত্মীয় পরিজনের কথা শোনা আবশ্যক৷ এর ফলে রোগীরা যেমন সন্তুষ্ট হবেন তেমনি চিকিৎসকদের পরিষেবার প্রতিও তাদের মনে সন্তুষ্টি আসবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গর্ভবতী মা ও শিশুরা সুুরক্ষিত থাকলেই রাজ্য বা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তৈরি হবে৷ তাই গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যু, শিশু মৃত্যু, রক্তাল্পতার হার হাস করার পাশাপাশি এইগুলি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ত্রিপুরার পরিচিতি বাড়বে৷
এই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজ্যের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও বেশি করে জনমুখী করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে৷ পাশাপাশি জেলা, মহকুমা হাসপাতাল সহ প্রাথমিক, সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজগুলি আরও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন৷ করোনা পরিস্থিতির সংকটকালে ১০ বছরের নীচে শিশু এবং ষাটোর্ধদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার যে প্রবণতা দেখা গেছে তার ধারাবাহিকতা আগামীদিনেও বজায় রাখার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷
তিনি আরও বলেন, রুটিন করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে মাস অনুসারে টিকাকরণ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলি গ্রহণ করতে হবে৷ তবেই এই স্বাস্থ্য কর্মসূচীগুলির সুুফল মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাবে৷ এক্ষেত্রে তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও সুুদৃঢ় করতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে প্রথমসারির নাগরিকদের মধ্যে চিকিৎসকগণ অন্যতম৷ চিকিৎসক সহ সমস্ত নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের কথা ভেবে সরকার রাজ্যে বিভিন্ন পরিকাঠামোর উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে৷ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন আবাসন নির্মাণ সহ অর্থনৈতিক পরিকাঠামো উন্নয়নে৷ আগরতলা সহ গোটা রাজ্যেকে আদর্শ রাজ্যে হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়ন কর্মযোগ্য অব্যাহত রয়েছে৷
সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো সকলকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরাকে সুুন্দর ও সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসেবে তুলতে চাইছে সরকার৷ পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিল্প ও বাণিজ্য প্রভ’তি ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হচ্ছে৷ পর্যালোচনা সভায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরা শাখার মিশন ডিরেক্টর ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়শওয়াল বলেন, চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করা দরকার৷ কারণ রোগীরা চিকিৎসকদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন৷ দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজনীয় জরুরী পরিষেবাগুলি কার্যকর রাখার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে সর্তকতামূলক সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তিনি আলোচনায় তুলে ধরেন৷
সভায় হেলথ সার্ভিস-দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা বলেন, রাজ্যের জেলা হাসপাতালগুলিকে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে৷ পাশাপাশি স্থানীয় এলাকার নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ সভায় পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ অধিকারের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসকরা অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ায় তিনি তাদের অভিনন্দন জানান৷ সভায় স্টেট সার্ভাইলেন্স অফিসার ডা. দীপ কুমার দেববর্মা রাজ্যে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং পরিষেবার দিকগুলি নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন৷
রাজ্যের ৮টি জেলার হেলথ সাবসেন্টার, হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টার, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পরিসংখ্যান তিনি সভায় তুলে ধরেন৷ একই সঙ্গে তিনি ২০১৭-১৮ সাল থেকে ২০২০-২১ সালের জেলাভিত্তিক ওপিডি, আইপিডি বিভাগে রোগীর সংখ্যা, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব, শিশু মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন৷ পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্য শিবিরের পরিসংখ্যান ও সভায় তুলে ধরা হয়৷ তাছাড়াও সভায় আলোচনায় আয়ুমান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় সুুবিধাভোগীদের মধ্যে ই-কার্ড বিতরণের বিষয়টিও প্রাধান্য পায়৷
পর্যালোচনা সভায় রাজ্যের ৮ জেলার চিফ মেডিকেল অফিসারগণ তাদের জেলাস্তরের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও পরিষেবা, ও পি ডি, আই পি ডি বিভাগে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা, শিশু মৃত্যু, স্বাস্থ্য শিবির আয়ুমান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা সম্পর্কে তথ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন৷ পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে অবহিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যাগুলি নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেন৷
সভায় রাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে তাদের অভিমত প্রকাশ করেন৷ সভায় রাজ্যের ৮টি জেলার সি এম ও, মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসাবে রাজ্যের ৮টি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের হাতে মারক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷