উৎসাহ ও উদ্দীপনায় এবং বর্ণময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজ্যে ককবরক ভাষা দিবস উদযাপিত

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৯ জানুয়ারি।। আজ ১৯ জানুয়ারি ককবরক ভাষা দিবস৷ উৎসাহ ও উদ্দীপনায় এবং বর্ণময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ রাজ্যে ককবরক ভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে৷ রাজ্যভিত্তিক ৪৩তম ককবরক ভাষা দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় উমাকান্ত একাডেমি প্রাঙ্গণে৷ ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর এবং উপজাতি গবেষণা ও সংস্ক’তি কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক ককবরক ভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা৷

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ককবরক ভাষা উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা, শিক্ষা দপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ড. শৈলেশ কুমার যাদব৷
রাজ্যভিত্তিক ককবরক ভাষা দিবস উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, আজকের দিনটি রাজ্যবাসীর কাছে বিশেষ করে জনজাতি সম্পদায়ের কাছে আনন্দের দিন৷ আজকের দিনেই ৪৩ বছর আগে ককবরক ভাষাকে স্বীক’তি দেওয়া হয়েছিল৷

তিনি এই দিবসটি উদযাপনের তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে বলেন, ককবরক ভাষা দীর্ঘ বছর ধরে সকলের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আজ সমৃদ্ধ ও বিকশিত হয়েছে৷ সাহিত্য চর্চাতেও ককবরক ভাষা আজ অনেকটা এগিয়ে গেছে৷ তবে এই ভাষা সেই ৪৩ বছর আগে থেকে আজ কতটা উন্নতি লাভ করতে পেরেছে তার মূল্যায়ন করতে হলে দশকের পর দশক আমরা এই ভাষাকে কতটা সমৃদ্ধ করতে পেরেছি তার মূল্যায়ন আগে করতে হবে৷ অনুষ্ঠানে রাজস্বমন্ত্রী শ্রীদেববর্মা বলেন, একটা ভাষাকে পরিপূরকভাবে উন্নতি করতে হলে তার প্রতিবেশি ভাষাকে সঙ্গে নিতে হবে৷ সেদিক দিয়ে ককবরক ও বাংলা ভাষা একে অপরের পরিপূরক৷ সাহিত্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাষার আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে ককবরক ভাষা আরও বিকশিত হবে৷

তিনি আরও বলেন, ককবরক ভাষার পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর ভাষার উন্নয়নেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ যাতে করে সকল ভাষার সমভাবে উন্নতি হতে পারে৷ শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া৷ রাজ্যভিত্তিক ককবরক ভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, আজ ককবরক সাল৷ আজকের দিনেই ১৯৭৯ সালে ককবরক ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল৷ সেই থেকে এই ভাষা সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হচ্ছে৷

তিনি বলেন, রাজ্যের ৮ লক্ষের বেশি মানুষ ককবরক ভাষায় কথা বলেন৷ তাছাড়াও বহু বাঙলাভাষীও ককবরক ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন৷ সবারই ককবরক ভাষা জানা উচিৎ, শেখা উচিৎ৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলার সাথে সাথে ককবরকও আমাদের রাজ্য ভাষা৷ তিনি ককবরক সাহিত্যের উত্তরণের প্রথমদিকের লেখকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ককবরক ভাষার উন্নতিকল্পে রাজ্য সরকার গত আড়াই বছরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করছে৷ এখন রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে রাজ্যে একটি ভাষা নীতি প্রণয়ন করা যায় কিনা৷

তিনি বলেন, ককবরক ভাষাকে আরও বেশি করে প্রাধান্য দিতে হবে৷ তিনি বলেন, ককবরক ভাষাকে আরও বেশি করে প্রাধান্য দিতে হবে৷ এই কাজে যুব সমাজ, শিক্ষক/শিক্ষিকা, গবেষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে৷ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর টেট পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি ককবরক ভাষাকেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে৷ অনুষ্ঠানে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, সাহিত্য, লোকসংগীত সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ককবরক ভাষা আজ অনেকটা বিকশিত৷ রাজ্য সরকার এই ভাষার বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে৷ তিনি বলেন, একটি জাতি গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি যতক্ষণ না বিকশিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই জাতি কখনো পূর্ণ বিকশিত হতে পারে না৷

তিনি বলেন, সরকার রাজ্যের সকল জাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, শিক্ষা, অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে৷ ককবরক ভাষার উন্নয়নে ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সকল জাতি গোষ্ঠীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে ককবরক ভাষা উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা বলেন, প্রতি বছর রাজ্যে গুরুত্ব দিয়ে এই দিনটি উদযাপিত হয়৷ ককবরক ভাষাকে আরও বেশি করে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে তার চর্চা আরও বাড়াতে হবে৷ অনুষ্ঠানে চারটি ককবরক ভাষার বই ও দুইটি পত্রিকার আবরণ উন্মোচন করা হয়৷

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিগণ এই বইগুলির আবরণ উন্মোচন করেন৷ তাছাড়া ইয়াকপা মরণিকার আবরণ উন্মোচণ করেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ রাজ্যভিত্তিক ককবরক ভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ সকালে শহরে এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়৷ উপস্থিত অতিথিগণ পতাকা নেড়ে এই র্যালির সূচনা করেন৷ র্যালিতে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া সহ অন্যান্য অতিথিগণ অংশ নেন৷ চিরাচরিত পোষাকে সজ্জিত হয়ে ব্যাপক অংশের জনজাতি সম্পদায়ের মানুষ রেলিতে অংশগ্রহণ করেন৷ র্যালিটি উমাকান্ত একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা শেষে পুনরায় উমাকান্ত একাডেমিতে এসে শেষ হয়৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?