প্যারেড ও কুচকাওয়াজে আরক্ষা প্রশাসনের মোট ৮টি প্ল্যাটুন অংশগ্রহণ করে৷ এরমধ্যে টি এস আর-এর প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম, দশম ও একাদশ বাহিনী, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ, মহিলা পুলিশ এবং হোমগার্ডের জওয়ানগণ৷ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জন সাধারণ ও পুলিশের মধ্যে আরও নিবিড় সংযোগ স্থাপন করা৷ পাশাপাশি পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের মাধ্যমে বছরের সার্বিক কাজকর্মের পর্যালোচনার সাথে সাথে পুলিশ বাহিনীর আরও গুণগত উৎকর্ষতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়৷ রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশ প্রশংসনীয় কাজ করছে৷ করোনা অতিমারির সময়েও পুলিশ প্রশাসন পারদর্শিতার সাথে কাজ করেছে৷
পুলিশ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস প্রয়াসের ফলেই বর্তমানে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সুুস্থতার হার ৯৮ শতাংশে রয়েছে৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পুলিশ প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ পুলিশ প্রশাসন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পারদর্শিতার সাথে কাজ করছে৷ ফলে দেখা গেছে রাজ্যে সড়ক দুর্ঘটনা, ধর্ষণ, খুন, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের মাত্রা অনেকটাই কমেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী তথ্য সহকারে বলেন, গত ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রাজ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ২৮.৮ শতাংশ কমেছে, ধর্ষণ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রাজ্যে ৭ শতাংশ কমেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রাজ্যে খুনের হার কমেছে ২০.৮ শতাংশ, ডাকাতি কমেছে ৬২.৫ শতাংশ এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ২০১৯ সালের তুলনায় ৮১.৮ শতাংশ কমেছে৷
রাজ্যে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যাও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ১৫.৪ শতাংশ কমেছে৷ পাশাপাশি রাজ্যে সাজাপ্রাপ্তির হারও বেড়ে ৩৮.০২ শতাংশে পৌঁছেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আরক্ষা প্রশাসন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০১৯ সালে ইমার্জেন্সী রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম চালু করেছে৷ এই পরিষেবার সাথে রাজ্যের ৭৩টি থানা, ৪৮টি অগিনির্বাপক কেন্দ্র এবং ২৪টি অ্যাম্বলেন্স যুক্ত রয়েছে৷ তাছাড়াও রাজ্যের সমস্ত ইমার্জেন্সী হেল্পলাইন নম্বরগুলিকে ১১২ নম্বরে রূপান্তর করা হয়েছে এবং মহিলাদের জন্য ১৮১ হেল্পলাইন নম্বরটি যুক্ত করা হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত তিন বছরে ডাই-ইন-হারনেসে পুলিশ পরিবারের ১৭৮ জনকে চাকুরি প্রদান করা হয়েছে৷ টি এস আর- এ ১,৪৮৮ জন রাইফেলম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে৷ ২০২০ সালের নভেম্বরে ৪৩ জন সাব ইনস্পেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে৷ আরও ২২ জন সাব ইনস্পেক্টর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে৷ তাছাড়াও ত্রিপুরা পুলিশে ৫০০ কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে৷ নিয়োগের পাশাপাশি পুলিশের আধুনিকীকরণের জন্য গত ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা পুলিশের নতুন প্রধান কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য কুঞ্জবনে ৫.২ একর জায়গা দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে বর্তমান রাজ্য সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরাকে হীরা বানানোর অঙ্গীকার করেছিলেন৷
সেই দিশায় সরকার কাজ করছে৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যে তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে৷ তিনি বলেন, সাবমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে আগামীদিনে ত্রিপুরা হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক করিডোর৷ সরকারের এই সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব বলেন, সমাজের বিকাশে পুলিশের যে অবদান রয়েছে তাকে স্বীকৃতি জানাতেই প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহ পালন করা হয়৷ এর মাধ্যমে নিজেদের আত্মমন্থনের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর আরও গুণগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়৷ রাজ্যে করোনা অতিমারির সময়ে পুলিশ প্রশাসন অসাধারণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল৷
করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যের ৭ জন আরক্ষাকর্মী মারা গেছেন৷ রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার যে সংকল্প নিয়েছে তা বাস্তবায়ণেও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক প্রয়াস জারি রেখেছে৷পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে রাজ্য পুলিশের উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়৷ পুলিশম্যান অব দ্যা ইয়ার-২০২০ প্রদান করা হয় কৈলাসহর মহকুমার এস ডি পি ও ড. চন্দন সাহাকে৷ শ্রেষ্ঠ টি এস আর ব্যাটেলিয়ন- ২০২০ এর স্বীক’তি পেয়েছে টি এস আর-এর দশম বাহিনী৷ শ্রেষ্ঠ জেলা পুলিশ ২০২০ পুরস্কার পেয়েছে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ, শ্রেষ্ঠ থানা- ২০২০ এর সম্মান অর্জন করেছে আমবাসা থানা, শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক হিসেবে সম্মান লাভ করেন মহিলা ইনস্পেক্টর রাংথাং মুই, বীট কনস্টেবলের সেরা কাজের শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে পুরস্কার অর্জন করে কাকরাবন থানা এবং ত্রিপুরা পুলিশের শ্রেষ্ঠ মিনিস্ট্রিয়াল স্টাফ- ২০২০ এর পুরস্কার পেয়েছেন জীবন মজমদার৷
এছাড়াও পুলিশের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরুস্কারে ভূষিত হন প্রাক্তন টি পি এস আধিকারিক স্বপন কুমার দে৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও পুলিশ পরিবারের মেধাবী ১৫ জন ছাত্রছাত্রীকে চীফ মিনিষ্টার মেধাবী পুরস্কার প্রদান করা হয়৷ পুরস্কার প্রাপকদের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷