রাজ্যে সেচ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে, জানালেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ জানুয়ারি।। সকলের কাছে পরিশ্রত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র৷ পানীয় জল সংযোগকারী পরিকাঠামোগুলি নির্মাণে গুণগতমান বজায় রাখার পাশাপাশি এগুলির দীর্ঘস্থায়িত্বের বিষয়টিকেও দপ্তরকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে৷ আজ রাজ্য অতিথিশালায় কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ত্রিপুরায় রূপায়িত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত একথা বলেন৷ পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী শ্রীশেখাওয়াত বলেন, জলজীবন মিশনের অধীনে রাজ্যে রূপায়িত পানীয় জল সংযোগ প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে মিশন মুডে কাজ করতে হবে৷

চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হবে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে জলজীবন মিশনের আওতায় বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল সংযোগ দেওয়ার কাজকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে৷ তবেই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পৌছানো সম্ভব৷ পাশাপাশি পানীয় জল সংযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সম্পদ সহ যন্ত্রপাতিগুলি যথাযথ কার্যকর রাখার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ পর্যালোচনা সভায় কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী বলেন, সকলকে পানীয় জল সংযোগের আওতায় আনতে রাজ্যের প্রতিটি গ্রামীণ এলাকার জন্য একসঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ রাজ্যে ওডিএফ প্লাস এর ক্ষেত্রে ক্ষেত্রপর্যায়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে৷ ওডিএফ প্লাসে কঠিন এবং তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও কিভাবে সূচারু করা যায় তার জন্য গ্রামীণ এলাকার মানুষদের যুক্ত করা প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি স্থানীয় প্রশাসকদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন৷

পানীয় জল পরীক্ষার জন্য গ্রামীণ এলাকায় পরীক্ষাগার করার পাশাপাশি দ্রত এক্রিডিটেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন৷ কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী আরও বলেন, জলজীবন মিশন রূপায়ণে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ত্রিপুরা অনেকটাই কেন্দ্রের সমগতিতে এগিয়ে চলেছে৷ আগামী মার্চের মধ্যে রাজ্যে আরও ১ লক্ষাধিক পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তা পূরণ হলে ত্রিপুরা জাতীয় গড়ের থেকে এগিয়ে যাবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে সেরা পারফরমার হিসেবে উঠে আসবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ জলজীবন মিশন প্রকল্প রূপায়ণে পরিকল্পনা এবং কাজ সম্পাদনের বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ রাজ্যে সেচ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে বলে তিনি জানান৷ পর্যালোচনা সভায় পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে রাজ্যে কেন্দ্রীয় জলজীবন মিশন, স্বচ্ছ ভারত মিশন এবং জলসেচ প্রকল্পগুলির অগ্রগতি সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যে ৩,২০,৪৭৩টি পরিবারে নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ১,০১,১১৮টি পানীয় জলের সংযোগের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে৷ আরও ২,১৭,২০২টি পরিবারে পানীয় জল সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে৷ তিনি বলেন, জলজীবন মিশনে ২০২০-২১ ,২০২১-২২, ২০২২-২৩ এই তিন অর্থবর্ষের জন্য কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে পানীয় জল সংযোগ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ২৮৮টি জনবসতিকে ১০০ শতাংশ নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে৷ ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ১০০ শতাংশ নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে৷

বিদ্যালয় এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কেন্দ্রের ১০০ দিনের অভিযান কর্মসূচি রূপায়ণে রাজ্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরে পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে জানান, এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৬৩.৪২ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৩১.৮৬ শতাংশ অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র পানীয় জল সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে৷ তিনি জানান, পানীয় জল পরীক্ষার জন্য বর্তমানে রাজ্যে একটি রাজ্যস্তরীয় পরীক্ষাগার এবং ৮টি জেলা পর্যায়ে, ১২টি মহকুমা পর্যায়ে এবং ৩টি সেওয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট-এর সঙ্গে যুক্ত জলের পরীক্ষাগার চালু আছে৷
সভায় পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্যে প্রত্যেকটি মহকুমাতেই পরীক্ষাগার চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ সভায় জানানো হয় স্বচ্ছভারত মিশনের অধীনে রাজ্যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এখন পর্যন্ত ৩১,৫৮০টি ব্যক্তিগত পারিবারিক শৌচালয় (আই এইচ এইচ এল) নির্মাণ করা হয়েছে৷ ১ এপ্রিল ২০২০ থেকে এখন পর্যন্ত ১৩টি কমিউনিটি স্যানিটারি কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ আরও ৫৬টি নির্মাণের কাজ চলছে৷ পর্যালোচনা সভায় ভারত সরকারের জলশক্তি দপ্তরের সচিব ইউ পি সিং রাজ্যে জলজীবন মিশন, স্বচ্ছভারত মিশন সহ জলসেচ প্রকল্পের কাজ আরও ত্বরান্বিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷

তিনি বলেন, স্বচ্ছভারত মিশনের অধীনে দ্বিতীয় পর্যায়ে কঠিন এবং তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ কমিউনিটি স্যানিটারি কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ হাওড়া নদী এবং রুদ্রসাগরে বর্ষাকালীন বন্যা সমস্যা নিরসনে রাজ্য সরকার কর্তৃক নেওয়া প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়টিও সভার আলোচনায় প্রাধান্য পায়৷ এদিনের পর্যালোচনা সভায় উত্তর প্রদেশের জলশক্তি মন্ত্রকের মন্ত্রী ড. মহেন্দ্র সিং, কেন্দ্রীয় জল জীবন মিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি রঞ্জিত এম এইচ, রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব, সচিব সহ দপ্তরের চিফ ইি’নীয়ারগণ উপস্থিত ছিলেন৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?