রাজ্য এখন আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছে : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ জানুয়ারি।। ত্রিপুরা আজ দেশ বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে রাজ্যে উৎপাদিত ক্যইন প্রজাতির আনারস, বাঁশের বোতল, বাঁশকুড়লের বিসুকট ও জনজাতিদের ঐতিহ্যপূর্ণ রিসার জন্য৷ বিগত সরকারের আমলে পিছিয়েপড়া রাজ্য এখন আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছে৷ আজ রাজ্যের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লজিস্টিক হাব, মৈত্রী সেতু, ৩,২০০ কোটি টাকার জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে রাজ্য এখন বিকাশের পথে হাঁটছে৷ আজ মোহনপুরের তারাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত রাজ্যব্যাপী জল জীবন মিশনে ২০টি জল সরবরাহ কেন্দ্র (ডিপটিউবওয়েল) ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লক্ষ পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল সংযোগকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷

উল্লেখ্য, জল জীবন মিশনে রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৫টি, ধলাই জেলায় ১টি, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৮টি, সিপাহীজলা জেলায় ৩টি, গোমতী ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় যথাক্রমে ২টি ও ১টি জল সরবরাহ কেন্দ্র (ডিপটিউবওয়েল) একযোগে উদ্বোধন করা হয়৷ তাছাড়া সমগ্র রাজ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে অটল জলধারা মিশনে ১ লক্ষ পানীয় জলের সংযোগকেও রাজ্যবাসীর প্রতি উৎসর্গ করা হয়৷ ২০টি জল সরবরাহ কেন্দ্রের মধ্যে আজ মোহনপুর ব্লকের বিজয়নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের গিরিশ সূত্রধর পাড়া ও লালটিলাতে ২টি জল সরবরাহ কেন্দ্রের সরাসরি উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত৷ পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ রাজ্যে শুধুমাত্র সরকারের পরিবর্তন হয়নি, সেদিন রাজ্যবাসী পেয়েছিলো স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার৷ বিগত সরকারে সর্বমোট ২৫ বছরের শাসনকালে সত্যিকারের উন্নয়ন ছিলো অধরা৷ বহির্রাজ্যবাসীর কাছে ত্রিপুরা রাজ্যের নাম ছিলো অচেনা৷ কিন্তু আড়াই বছরের এই সরকারের শাসনকালে রাজ্য সারা দেশের কাছে হয়ে উঠেছে উন্নয়নের রূপরেখা রূপায়ণের এক চূড়ান্ত মাপকাঠি৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে রাজ্যের সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা প্রচুর৷ সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করছে এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে৷

তিনি বলেন, গত আড়াই বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রায় ৯৬ হাজার কর্মসংস্থানের সুুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ এরমধ্যে ২৩ হাজার সরকারি পদে রেগুলার, আউট সোর্সিং এবং কন্ট্রাকচুয়ালে লোক নিয়োগ করা হয়েছে৷ রাজ্যে সাতশোর মতো নথিভুক্তকৃত ফুলচাষি রয়েছে৷ তাদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ভর্তকিতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে৷ বর্গাদার ও ভূমিহীন কৃষকদের কেসিসি লোন দেওয়া হবে৷ বর্তমান সরকারই প্রক’তপক্ষে গরিব, কৃষক সহ সমস্ত স্তরের জনগণের জন্য প্রকৃত সরকার৷ সরকার সমস্ত অংশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে৷ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলির বিকাশ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়৷

তাই বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকালের প্রথম থেকেই পূর্বোত্তরকে সক্ষম ও সমৃদ্ধ করার দিকে দৃষ্টি রেখেই বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও সংকল্প নিয়ে কাজ করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, দেশের বিশেষ তালিকাভুক্ত রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণে নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছে৷ ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ও সম্পন্ন ত্রিপুরা রাজ্য বানানোর অভিমুখে কাজ করা হচ্ছে৷ রাজ্যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে৷ রাজ্যে ক’ষির ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট সংকল্প নিয়েছিলেন৷ যা ২০২৪-র মধ্যে পূরণ করা হবে৷ বিগত কেন্দ্রীয় সরকারের ৭০ বছরের শাসনে দেশের মাত্র ৩ কোটি ২৩ লক্ষ পরিবারকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছিলো৷

কিন্তু কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার পর ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল থেকে ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এক বছর শাসনকালে ৩ কোটি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ সমস্ত রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্বেও আজ ত্রিপুরা রাজ্যে গত এক বছরে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার হার ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ রাজ্য সরকারের অনুরোধে রাজ্যের যেসব অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের মাধ্যমে সেচের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা রয়েছে সেসব অ’লের জন্য ৩০০টি জলসেচের উৎস সৃষ্টি করতে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷ এরফলে রাজ্যের ৬ হাজার হেক্টরের উপর ক’ষিভূমি জলসেচের আওতায় আসবে বলেও জানান তিনি৷

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা বানানোর অভিমুখে নিরলসভাবে কাজ করে চলছে৷ রাজ্যের আপামর জনগণ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সামিল না হলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে৷ তাই রাজ্য সরকার নতুন ও আত্মনির্ভর ত্রিপুরা বানাতে সচেষ্ট৷ এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের জলশক্তি দপ্তরের মন্ত্রী ড. মহেন্দ্র সিং, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, মোহনপুর পঞ্চায়ত সমিতির চেয়ারম্যান বীণা দেববর্মা, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের সচিব ইউ পি সিং, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে প্রমুখ৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?