অনলাইন ডেস্ক, ৬ জানুয়ারি।। ২০১২-র জুন মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। অনেকটা নিমরাজি হয়েও শেষ পর্যন্ত প্রণববাবুকে সমর্থন জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই কেন্দ্রের মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে আসেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউপিএ সরকার ছেড়ে মমতার বেরিয়ে আসা নিয়ে এতদিন একটি শব্দও খরচ করেননি প্রণববাবু।
কিন্তু প্রয়াত রাষ্ট্রপতি তাঁর আত্মজীবনীতে মমতার জোট ছাড়া প্রসঙ্গে অকপট স্বীকারোক্তি লিখে রেখে গিয়েছেন। নিজের আত্মজীবনীতে স্পষ্ট লিখেছেন, আমি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনওই জোট ছেড়ে যেতে দিতাম না। মমতা যাতে জোটে থাকে সে বিষয়টি সর্বতোভাবে নিশ্চিত করতাম। মঙ্গলবার প্রণববাবুর আত্মজীবনীর চতুর্থ খন্ড ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স’ প্রকাশিত হয়েছে। ওই বইয়ের একটি অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, সংকটের মুহূর্তে কংগ্রেস নেতৃত্ব দিশা হারিয়ে ফেলেছিল। নেতৃত্বের উচিত ছিল, সংকটের সময় ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি অনুযায়ী অগ্রসর হওয়া। কিন্তু সেটা তারা করেনি।
আমি যদি সে সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকতাম তবে হলফ করে বলতে পারি, মমতাকে কখনওই জোটের বাইরে যেতে দিতাম না। প্রণববাবুর এই কথায় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তিনি কার্যত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সমালোচনা করেছেন। প্রণববাবু এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, মনমোহন সিং পরিস্থিতি ঠিকমত সামলাতে না পারায় প্রথম ইউপিএ জোট সরকার ছেড়েছিল বামেরা। ঠিক তেমনই দ্বিতীয় দফায় জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ তিনি এটাই বলতে চেয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সেই দায়িত্ব নিজের হাতে রেখে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সে সময় একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করেছিল মনমোহন সরকার। যেমন প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল সরকার। ভর্তুকি মূল্যে গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা কমিয়ে এনেছিল, একই সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল। এসবের প্রতিবাদ করেছিলেন মমতা।
কিন্তু মমতার প্রতিবাদে কর্ণপাত করেননি মনমোহন সিং। বরং তিনি তাঁর সংস্কারের বিষয়ে অনড় ছিলেন। সেসময় মনমোহন সিং পাশে পেয়েছিলেন পি চিদম্বরমকে। কিন্তু তার জন্য তাঁকে মমতাকে হারাতে হয়। মমতা জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের যে ক্ষতি হয়েছিল সেটাই নিজের আত্মজীবনীতে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।