দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা আগামীদিনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্নদাতা হয়ে উঠবে : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, বিলোনীয়া, ৪ জানুয়ারি।। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা আগামীদিনে উত্তর পূর্র্বঞ্চলের অন্নদাতা হয়ে উঠবে৷ এই লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করছে৷ আজ বিলোনীয়া মহকুমার রাজনগর ব্লকের কাশারিমুখ থেকে গৌরাঙ্গবাজার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিলোনীয়ায় নবনির্মিত জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷

বিলোনীয়ার বিকেআই দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, মাত্র আড়াই বছরেই রাজ্যের উন্নয়নে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে সরকার৷ সমৃদ্ধ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার৷ সাবমে বিশেষ অর্থনৈতিক অ’ল ও মৈত্রী সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেলে রাজ্যের আর্থিক বিকাশে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে৷ সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নতুন নতুন জাতীয় সড়ক গড়ে তোলা হচ্ছে৷ আগামী এক বছরে আরও সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার সড়ক নির্মাণ হবে৷

বিকল্প জাতীয় সড়ক দিয়ে চুড়াইবাড়ি থেকে আগরতলা আসা যাবে মাত্র আড়াই ঘন্টায়৷ ধর্মনগর, পেঁচারথল ও কৈলাসহরে ৭০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক তৈরি করা হবে৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এসমস্ত কর্মসূচি রূপায়িত হলে আগামীদিনে ত্রিপুরা বিকাশের পথে হাঁটবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ক’ষকদের কাছ থেকে সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় করা হচ্ছে৷ ক’ষকদের আর্থিক উন্নতির জন্য রাজ্যের ৫০ হেক্টর জমি ভুট্টা ও মাসকলাই চাষের আওতায় আনা হবে৷ রাজ্যের ২ লক্ষ ২২ হাজার ক’ষক প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পের সুুযোগ গ্রহণ করেছেন৷ এরমধ্যে বিলোনীয়া মহকুমার ৪,৮০২ জন কৃষক রয়েছেন৷

এরফলে ৫ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ক’ষকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার মাধ্যমে৷ যাদের এক একরের কম জমি রয়েছে তাদের ফসল বীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় কৃষি দপ্তর থেকে ১৮০ জন ক’ষককে ক’ষি যন্ত্রপাতি ভর্তকিতে দেওয়া হয়েছে৷ এতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা৷ উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তর থেকে জেলার ৩৭ হেক্টর এলাকায় আনারস, কলা, মোসাম্বি চাষের আওতায় আনা হয়েছে৷ এতে ২৩১ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন৷ জেলার কৃষকদের ভর্তকিতে ৫৬টি পাওয়ারটিলার দেওয়া হয়েছে৷ ত্রিপুরার উৎপাদিত ক্যইন প্রজাতির আনারস দেশ বিদেশের বাজারে বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷

ত্রিপুরার বাঁশের বোতলের চাহিদা দেশ বিদেশের বাজারে রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের মধ্যেই রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পরিশ্রত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হবে৷ জেলায় অটল জলধারা প্রকল্পে ৩,৪৪৪টি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ নগর উন্নয়নের জন্য ১,৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে৷ বিলোনীয়া পুর এলাকার উন্নয়নের জন্য ৮৪ থেকে ৮৫ কোটি টাকা দেওয়া হবে৷ আগরতলায় লাইট হাউজ প্রকল্পে একহাজার ফ্ল্যাট আগামী ১২ মাসের মধ্যেই নির্মাণ করা হবে৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার গৃহ দেওয়া হবে৷ সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, রাজ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ এই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে বিলোনীয়া ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়কে সি বি এস ই বোর্ডের আওতায় আনা হয়েছে৷ সাথে প্রাকপ্রাথমিক বিভাগও খোলা হয়েছে৷

বিলোনীয়া ইংরেজি মাধ্যম সুকল ও আর্যকলোনী দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে৷ পাইখলা দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে বি’ান ল্যাবরেটরি ও ৩টি ক্লাস রুম নির্মাণ করা হয়েছে৷ নতুন দিশা প্রকল্পে ৪,০৫২ জন ছাত্রছাত্রীকে আপগ্র্যাড করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় এমজিএন রেগায় ১৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৮৪৬ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) ২৩৯টি ঘরের কাজ চলছে৷ স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে ৬১২টি৷ ৩৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাকাবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে৷ পুরান রাজবাড়ি থেকে ভবানীপুর ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ করা হবে৷ তিনি বলেন, দুগ্দ শিল্পের বিকাশে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ২টি ডেয়ারি ফার্ম নির্মাণ করা হবে৷ জেলার ৫৭৯ জন মৎস্যচাষিকে বিনামূল্যে মাছের পোনা দেওয়া হয়েছে৷

৪০ জন মৎস্যচাষিকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে৷ একটি মৎস্য বাজার নির্মাণ করা হয়েছে৷ নলকূপের পাম্প হাউজ, ২,০০০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন হিমঘর, ৩০০০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন সারের গোডাউন, মোক হাউজ, ইকোপার্ক, বি কে আই ও বালিকা বিদ্যালয়ে ১০০ শয্যা করে দুটি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে৷ অনুষ্ঠানে বিধায়ক অরুণচন্দ্র ভৌমিক, বিধায়ক শঙ্কর রায়, বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷ সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি কাকলি দাস দত্ত৷ উল্লেখ্য, কাশারিমুখ থেকে গৌরাঙ্গবাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?