অনলাইন ডেস্ক, ৩ জানুয়ারি।। সামাজিক কোনো বিষয়ের কথা এলে দেখা যায় মিথ্যার অস্তিত্ব থাকতে পারে কিংবা অন্তত সাদামাটা কিছু নির্দোষ মিথ্যা- যা হয়তো সমাজে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন, ‘প্রতিদিনই জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ গুরুতর মিথ্যা বলে। যদিও সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে, পাঁচ শতাংশ মানুষ দাবি করেছে যে তারা কখনোই মিথ্যা বলেনি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আমাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করে চালানো জরিপেও সত্যি বলতে অপারগ…
মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন, ‘আমরা মিথ্যা বলায় বেশ ভালো, মিথ্যা শনাক্তকরণে বেশ বাজে।’আমরা মনে করি যে প্রতারণা ধরে ফেলতে আমরা বেশ দক্ষ, কিন্তু যখন দুইজন মানুষকে আপনি গবেষণাগারে নিয়ে যাবেন এবং একটি ভিডিও দেখাবেন যেখানে একজন মানুষ মিথ্যা বলছেন এবং আরেকটিতে তারা সত্যি কথা বলছে- এরপর যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোনটা কি-তখন তাদের মধ্যে কেবল ৫০ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে বলতে পারবে।
কারও মিথ্যা ধরতে হলে চোখ নয় নিজের কান-দুটো ব্যবহার করুন-
মিথ্যা ধরে ফেলতে আমরা খুব একটা দক্ষ নই কারণ আমরা সব চাক্ষুষ করে বা চোখ দিয়ে দেখে তারপর বিচার-বিবেচনা করি। আমাদের ব্রেইনের বিশাল অংশ নিয়োজিত রয়েছে দৃষ্টিগোচর করার কাজে এবং সে কারণে কেউ মিথ্যা বলছে কিনা তা শনাক্ত করার জন্য আমরা এভাবেই বোঝার চেষ্টা করি।
তারা কি তাদের বসার আসনের চারদিকে ঘোরাঘুরি করছে? তারা কি ইঙ্গিত করছে? তাদের মুখের ভঙ্গি কেমন?এর অধিকাংশ বিষয় মোটামুটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সুদক্ষ মিথ্যাবাদীরা জানে অন্য লোকেরা কিভাবে চেষ্টা করে এবং মিথ্যা ধরে ফেলতে চায়।
এর বাইরের সংকেতগুলো হচ্ছে মৌখিক: আমরা যা বলি এবং যেভাবে বলি।এটা নিয়ন্ত্রণ করা মিথ্যাবাদীদের জন্য বেশ কঠিন- সুতরাং সেদিকে যদি আপনি নিজের মনোযোগ দেন তাহলে আপনি হবেন আরও ভালো মিথ্যা শনাক্তকারী।
যারা মিথ্যাবাদী তারা সাধারণভাবে কম কথা বলে; তারা একটি প্রশ্নের পর উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় নেয়; এবং তারা মিথ্যা থেকে নিজেদের দূরত্ব দেখাতে চায়: তাই ‘আমি’, ‘আমার’ এবং ‘আমি’ শব্দগুলো প্রায়শই বাদ পড়ে যায়।
মানুষ কখন মিথ্যাচার শুরু করে?
আমরা দ্রুত মিথ্যা বলতে শুরু করি, কিন্তু মিথ্যাবাদীকে চিনতে পারি না।গবেষক রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন, বাচ্চারা কখন থেকে মিথ্যা বলতে শুরু করে সে বিষয়ে কিছু মজার বিষয় উঠে এসেছে।
‘আপনি শিশুদের একটি কক্ষে নিয়ে যাবেন, এবং তাদের বলবেন, ‘আমরা তোমার প্রিয় খেলনা তোমার পেছনে রেখে দেবো, কিন্তু প্লিজ তাকাবে না’- এবং এরপর আপনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাবেন এবং তাদের আবারো মনে করিয়ে দিন খেলনার দিকে না তাকাতে।’যেহেতু কোনও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড আপনি প্রত্যক্ষ করবেন, আপনি বুঝতে পারবেন যে, কয়েক মিনিট পরেই তারা খেলনার দিকে তাকাবে।
এরপর কক্ষে ফিরে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চান, ‘তোমরা কি খেলনার দিকে তাকিয়েছিলে?’ তবে মিথ্যাবাদী হওয়াটা সবসময়ই যে খুব খারাপ বিষয় তেমনটি নাও হতে পারে।সর্বোপরি, মিথ্যা ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না: এটা আসলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব গুরুতর রূপ নিয়েছে।