রাজ্যের আর্থিক বিকাশ ও মানুষের সামাজিক মানোন্নয়ন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, কাঞ্চনপুর, ২৮ ডিসেম্বর।। দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিকাশমুখী একটি সরকার কাজ করছে৷ রাজ্যেও বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে রাজ্যের আর্থিক বিকাশ ও মানুষের সামাজিক মানোন্নয়ন৷ আজ দেওড়াছড়ায় তিলথৈ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নবনির্মিত ভবন ও অটল সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷

এর আগে উত্তর ত্রিপুরা জেলার তিলথৈ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নবনির্মিত ভবন ও যুবরাজনগর-দেওড়াছড়া সড়কে জরি নদীর উপর নবনির্মিত অটল সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিলথৈ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা৷ জরি নদীর উপর অটল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা৷ এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭০ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার৷ এই উপলক্ষে দেওড়াছড়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এক সময় আমাদের ত্রিপুরাকে সবাই চিনতো না৷

আজ ত্রিপুরার ক্যইন ভ্যারাইটির আনারস দেশ বিদেশের বাজারে যাচ্ছে৷ ত্রিপুরার রিসা এখন আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেয়েছে৷ দেশ বিদেশের অনেকেই এখন ত্রিপুরার কথা জানেন৷ এটা সম্ভব হয়েছে ত্রিপুরা বিকাশের পথে হাঁটছে বলেই৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের যুবকরা এখন আনারস চাষ করে স্বনির্ভর হচ্ছেন৷ আনারস চাষিদের সরকার বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে৷ তাদের উৎপাদিত আনারস দেশ বিদেশে বাজারজাত করারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় করা হচ্ছে৷ এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন৷ এর আগে কৃষকদের কাছ থেকে কখনোই সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় করা হয়নি৷

কৃষির বিকাশ ও কৃষকদের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় কৃষকদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়ে গেলে কৃষকরা যাতে বীমার সুুযোগ পান সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় কৃষকদের নিয়ে আসা হচ্ছে৷ বেশি সংখ্যায় কৃষকদের বীমার আওতায় নিয়ে আসতে সরকার ’মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা’ চালু করেছে৷ তিনি বলেন, উত্তর জেলায় ২,৮৬৬ হেক্টর জমি বীমার আওতায় আনা হয়েছে৷ এতে ১৭,৯১৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষক এখন পর্যন্ত ফসল বীমা যোজনার আওতায় এসেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মানুষের আয় বাড়ছে৷

আগে মাথাপিছু আয় ছিলো ১ লক্ষ ৪৪৪ টাকা৷ গত ২ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় ২৩ বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা৷ তিনি বলেন, উত্তর জেলায় কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পেয়েছেন ২৪,১৭৮ জন কৃষক৷ এরমধ্যে ১০ হাজার ১৮৩ জন কৃষক কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পেয়েছেন৷ তাদের প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ ১৬ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা৷ গত ২৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় দেশের ৯ কোটি ক’ষকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে৷ এই যোজনায় বছরে ৩ কিস্তিতে কৃষকরা ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন৷উত্তর ত্রিপুরা জেলায় এই যোজনায় এখন পর্যন্ত ৪১,১১৩ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন৷

ক’ষির বিকাশ ও কৃষকের কল্যাণে উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ১,২৫২ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল ধান চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে উচ্চফলনশীল ধান বীজ উৎপাদনেও উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ অন্যান্য রাজ্যে উচ্চফলনশীল ধান বীজ সরবরাহে প্রয়াস নিতে পারে রাজ্য৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর মহকুমার জনজাতিদের উন্নয়নেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ বন্ধন বিকাশ কেন্দ্রের মাধ্যমে কাঞ্চনপুর মহকুমায় ৩০০টি স্বসহায়ক দল তৈরি করা হবে৷ কাঞ্চনপুর মহকুমার জনজাতি অংশের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে এই স্বসহায়ক দলগুলিকে যুক্ত করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর জেলায় চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়নেও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে৷

জেলার ধর্মনগরে একটি ট্রমা সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে৷ জেলার দামছড়া, উপ্তাখালি, রাজেন্দ্রনগরে ৩টি নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে উত্তর ত্রিপুরা জেলার উন্নয়নে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলি উত্তর ত্রিপুরা জেলায় যথাযথভাবে রূপায়ণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এম জি এন রেগা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আয়ুমান ভারত প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী কৃষি যোজনার সুুবিধা জেলার প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷

তিনি বলেন, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় গুণগত শিক্ষার প্রসারেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ ধর্মনগরে একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ধর্মনগরের গোল্ডেন ভ্যালি ইংলিশ মিডিয়াম সুকল ও কাঞ্চনপুর ইংলিশ মিডিয়াম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়কে সি বি এস ই-র অধীনে নেওয়া হয়েছে, যাতে উত্তর জেলার এই দুই মহকুমার ছাত্রছাত্রীরা সি বি এস ই পাঠক্রমে পড়ার সুুযোগ পায়৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনায় উত্তর জেলার ১,২২৮ জন স্ট্রিট ভেণ্ডরকে ঋণ পেতে সহায়তা করা হচ্ছে৷

এরমধ্যে ২৬৮ জন ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকা করে ঋণ পেয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে বনজ সম্পদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলার আগর গাছ একটি মূল্যবান বনজ সম্পদ৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলায় আগর চাষে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধ সেন বলেন, সরকার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করছে৷ কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করছে সরকার৷ এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন৷ ক’ষির পাশাপাশি রাজ্যের সার্বিক বিকাশে সরকার কাজ করছে৷

তিনি এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তুলতে সরকারের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস, উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি ভবতোষ দাস, সমাজসেবী যাদবলাল নাথ৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলাশাসক নাগেশ কুমার বি৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুবরাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান শ্রীপদ দাস, পানিসাগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সঞ্জয় দাস, সমাজসেবী মলিনা দেবনাথ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ দীপক চন্দ্র দাস, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?