অনলাইন ডেস্ক, ২৬ ডিসেম্বর।। রাজস্থানের উদয়পুরের দুধ বিক্রেতা খেয়ালিলাল সিংয়ের চার ছেলেমেয়ে। সোনাল শর্মা তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। ছোট থেকেই বাবা-মাকে বাড়ির কাজে সব ধরনের সাহায্য করতো সোনাল। ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে তার প্রথম কাজ ছিল গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা। তারপর বাবার দুধ দোয়া হলে সেই দুধ সে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিত। আবার বেলার দিকে মাঠে গরু চরাতেও যেত সে। পাশাপাশি সমানতালে চলেছে তার পড়াশোনা।
গোয়াল ঘরই ছিল তার পড়াশোনার জায়গা। সেখানে তেলের খালি টিন ছিল তার পড়ার টেবিল। তবে সোনালের সেই পরিশ্রম বৃথা যায়নি। বর্তমানে সোনাল রাজস্থানের সেশন কোর্টের একজন বিচারক। রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিসে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই সে পাশ করেছে। ছোট থেকেই সোনাল ছিল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। বিএ, এলএলবি, এলএলএম-তিন পরীক্ষাতেই সে টপার হয়েছিল। পেয়েছিল স্বর্ণ পদক। ২০১৮-য় সে রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসেছিল। যার ফলাফল বের হয় ২০১৯-এ। তারপর এক বছরের প্রশিক্ষণ। সোনাল কাট অফ মার্কস থেকে এক নম্বর কম পেয়েছিল তাই তার কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সে জানতে পারে, নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও সাতজন পরীক্ষার্থী জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দেয়নি। তখনই সে হাইকোর্টে আবেদন করে জানায়, জুডিশিয়াল সার্ভিসে এখনও বেশ কয়েকটি আসন খালি আছে, তাকে যেন সুযোগ দেওয়া হয়।
এরপরই দু’দিন আগে রাজস্থান হাইকোর্ট সোনালকে জানিয়ে দেয়, চাইলে তিনি বিচারক পদে যোগ দিতে পারেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সোনাল সেশন কোর্টের বিচারক পদে যোগ দেন।সোনালের মেন্টর সত্যেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন স্কুল জীবন থেকেই সোনালের কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। সে কখনো কোনও কোচিং সেন্টারে পড়তে যায়নি। কারণ স্কুল, কলেজের বাইরে গৃহশিক্ষক রেখে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না তার পরিবারের। এমনকি কলেজের সব বইপত্র কিনে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। তাই স্কুল-কলেজে তার বেশিরভাগ সময় কাটত লাইব্রেরিতে। সোনাল জানিয়েছেন, তাঁকে পড়াতে গিয়ে বাবার অনেক ধারদেনা হয়েছে। সবার আগে তিনি ওই ধার দেনা শোধ করবেন। একই সঙ্গে সমাজের অবহেলিত ও নিপীড়িত মানুষরা যাতে উপযুক্ত বিচার পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। আগামী দিনে তাঁর মা-বাবা যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারেন সে ব্যবস্থাও করবেন তিনি।