অনলাইন ডেস্ক, ১৫ ডিসেম্বর।। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল যুক্তরাষ্ট্র। এস-৪০০ কেনা নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে বিরোধ চলছিল ওয়াশিংটনের। নানা হুমকি উপেক্ষা করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির প্রথম চালান আসতেই তুরস্ককে যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা ন্যাটোর নীতি-বিরোধী এবং মার্কিন সেনার কাছে বিপদের কারণ।
ফলে ক্ষমতার একেবারে শেষ দিকে এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। ডয়চে ভেলে জানায়, তুরস্কের সামরিক সাজসরঞ্জাম কেনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও তার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে একাধিকবার জানিয়েছে, তারা যদি এস ৪০০ সিস্টেম কেনেন, তা হলে তা মার্কিন সেনার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ হবে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ও প্রতিরক্ষা শিল্প ক্ষেত্রে রাশিয়া ঢুকে যাবে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের হাতে প্রচুর অর্থ চলে আসবে। এ সবই যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তার কারণ। ’পম্পেও বলেন, ‘তুরস্কের সামনে বিকল্প সিস্টেমও ছিল। ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো সেই সিস্টেমই ব্যবহার করে।
’তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্ক হলো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু দেশ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শরিক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র চায়, তুরস্কের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় থাক, সামরিক সহযোগিতা বজায় থাক। কিন্তু সেটা করতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এস-৪০০ এর বাধা দূর করতে হবে। ’জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাবুসওলু জানান, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা নিষেধাজ্ঞা খারিজ করছেন ও এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করছেন। তুরস্কের মিলিটারি প্রকিওরমেন্ট এজেন্সি এসএসবির প্রধান ইসমাইল ডেমির জানান, এর ফলে তুরস্কের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি হবে না। তুরস্ক নিজের দেশে সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলবেই।
আঙ্কারা আগেই জানিয়েছিল, তারা প্রথমে মার্কিন প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা বিক্রি করতে রাজি হয়নি। তখন তারা রাশিয়ার সিস্টেম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। তা ছাড়া গ্রিসও রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। তাদের যুক্তরাষ্ট্র কিছু বলেনি। প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার মাস খানেক আগে ট্রাম্প তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও মনে করেন, তুরস্ক রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনে ভুল কাজ করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মতে, পশ্চিমাদের তৈরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকেও সর্বাধুনিক এই রুশ এস-৪০০। এটির রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপণ কিংবা অন্যান্য সেন্সরের ক্ষমতা অনেক বেশি।
তারা জানান, এই রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডার ৬০০ কিলোমিটার এলাকার ওপর নজরদারি করতে পারে। এটির ক্ষেপণাস্ত্রের সীমা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণেও অনেক নির্ভুল। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এস-৪০০ একই সময়ে ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। একই সময়ে ৭২টি রকেট ছুড়তে সক্ষম এটি। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে দূর পাল্লা, মাঝারি পাল্লার এমনকি স্বল্প পাল্লার রকেট ছোড়া যায়। এটি নির্ভর করবে ব্যবহারকারীর ইচ্ছার ওপর।