স্টাফ রিপোর্টার, আমবাসা, আগরতলা, ৭ ডিসেম্বর৷৷ আবারও জঙ্গী আতঙ্কের ছায়া রাজ্যের পাহাড়ী এলাকায়৷ দিনদুপুরে বন্দুকের মুখে তিন শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে জঙ্গীরা৷ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে ধলাই জেলার গঙ্গানগর থানার অধীন মালদা কুমার রোয়াজা পাড়ার হরিয়ামনি এলাকায়৷ অপহৃতরা ওই এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজে নিযুক্ত৷
অপহরণের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা চিরুনী তল্লাসী চালিয়েছে৷ কিন্তু, রাতে খবর লেখা পর্যন্ত কোন হদিশ পাওয়া যায়নি অপহৃতদের৷ এমনকি মুক্তিপণ সংক্রান্ত কোনও তথ্যও প্রকাশ্যে আসেনি৷ এদিকে, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক বিএসএফের আইজির সাথে বৈঠক করেছেন এবং গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷ সংবাদে প্রকাশ, গঙ্গানগরের মালদা কুমার রোয়াজা পাড়ার হরিয়ামনি এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ চলছে৷ এলাকাটি গভীর জঙ্গল৷
প্রতিদিনকার মত সেখানে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন৷ তখন সাইট সুপারভাইজার সুভাষ ভৌমিক, জেসিবি চালক সুবল দেবনাথ এবং লেবার সর্দার গণপতি ত্রিপুরা পানীয় জল সংগ্রহ করার জন্য পাশের একটি ছড়ায় যায়৷ ছড়াটি লুঙ্গা এলাকায় এবং এলাকাটি গভীর জঙ্গলে ঘেরা৷ জল আনতে সেখানে যেতেই পাহাড়ের উপর থেকে পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গী ছড়ার কাছে আসে৷ তখন পাহাড়ের উপর আরও তিনজন জঙ্গী ছিল৷
ছড়ায় এসে সেকেরকোটের বাসিন্দা সুভাষ ভৌমিক, বিশালগড়ের বাসিন্দা সুবল দেবনাথ এবং গন্ডাছড়ার বাসিন্দা গণপতি ত্রিপুরাকে বন্দুকের মুখে জোর করে অপহরণ করে পাহাড়ের উপরে উঠে গভীর জঙ্গলের দিকে চলে যায়৷ এদিকে, দীর্ঘ সময় যাবৎ এই তিনজন জল নিয়ে ফিরে না আসায় অন্যান্য শ্রমিকরা ছড়ার দিকে ছুটে যায়৷ বহু খোঁজাখুঁজি করে তাদের সন্ধান না পেয়ে প্রায় দুইশ মিটার দূরত্বে বিএসএফ ক্যাম্পে ছুটে যান এবং বিষয়টি বিএসএফ কর্তৃপক্ষকে জানান৷
যে এলাকায় বিএসএফের ক্যাম্পটি রয়েছে সেটির নাম বিশ্বাস বিওপি৷ সেখানে কর্মরত রয়েছে বিএসএফের ১৩৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা৷ অপহরণের ঘটনার খবর পেয়ে বিএসএফ জওয়ানরা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান৷ খবর দেওয়া হয় ধলাই জেলার পুলিশ সুপার, আমবাসা মহকুমা পুলিশ আধিকরীক এবং গঙ্গানগর থানায়৷ সাথে সাথেই তাঁরা বিশাল সংখ্যায় পুলিশ ও টিএসআর জওয়ানদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন৷
আশাপাশের এলাকায় চিরুনী তল্লাসী চালানো হয় বিএসএফের সহযোগিতায়৷ জানা গিয়েছে, যে এলাকা থেকে ওই তিনজনকে অপহরণ করা হয়েছে সেটি ইন্দো-বাংলা সীমান্তের ২২৭৭-২২৭৮ পিলারের মাঝখানে৷ ওই এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে ওই উন্মুক্ত এলাকা দিয়েই জঙ্গীরা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করেছে৷ আরও জানা গিয়েছে, ওই সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে খাগড়াছড়ি রেঞ্জ শুরু হয়ে যায়৷
আর খাগড়াছড়ি রেঞ্জে জঙ্গীদের বহু ঘাঁটি রয়েছে৷ সেখানে জঙ্গীদের ক্যাম্পে আগ্ণেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণও হয়৷ ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে খাগড়াছড়ির গভীর জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে জঙ্গী ঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এখনও কিছু ঘাঁটি রয়েছে বলে বিএসএফের কাছে পাকাপোক্ত তথ্য রয়েছে৷ এদিন,অপহরণের ঘটনার পরপরই রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক বিএসএফের আইজি-কে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছিল৷
কিন্তু, সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন রিপোর্ট দিতে পারেননি বিএসএফের আইজি৷ সন্ধ্যার পর বিএসএফের আইজির সাথে বৈঠক করেন পুলিশের মহানির্দেশক৷ দীর্ঘ সময় চলে তাঁদের মধ্যে আলোচনা৷ রাত পর্যন্ত পুলিশ কিংবা বিএসএফ কোন হদিশ পায়নি অপহৃতদের, জঙ্গীদের ধরা তো দূরের কথা৷ প্রসঙ্গত, এডিসি নির্বাচনের প্রাককালে পাহাড়ে জঙ্গী তৎপরতা বিভিন্ন মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে৷