স্টাফ রিপোর্টার, সাব্রুম, ২৫ নভেম্বর।। “পালকি চলে! পালকি চলে! গগন-তলে আগুন জ্বলে!” ছোট বেলায় এই কবিতাটি আমারা সবাই মোটামুটি পড়েছি। এই পালকি ঘিরে যত গান, যত কবিতা রচিত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। বাস্তবে আজ আর পালকি চড়াতো দূরের কথা দেখাও যায় না।
ত্রিপুরার প্রান্তিক শহর সাব্রুম মহাকুমার অন্তর্গত সাব্রুমের বাসিন্দা লক্ষণ দে এর ছেলের গতকাল বিয়ে হয়। আজ বিকালে শুভঙ্কর দে তার নববধূকে বাড়িতে নিয়ে আসে পালকিতে করে। আর যখন পালকি করে বউ নিয়ে আসছিল তখন রাস্তার দু’ধারে মানুষ এর উচ্ছে পড়া ভিড় ছিল । পালকিতে বউ যায় এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। নানা জনে নানা মন্তব্য, অভিমত দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, আধুনিক প্রযুক্তির যানবাহনের যুগে হারিয়ে গেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য ‘পালকি’। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পালকি ছেড়ে এখন নামি-দামি গাড়ি নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজিয়ে বর-কনের বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পালকির সঙ্গে মিশে ছিল মধুময় এক স্বপ্ন। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছুয়াঁয় কত কিছু পাল্টায়। পাল্টায় সংস্কৃতি, সভ্যতা। সেই সঙ্গে বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। এ পরিবর্তনের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় সংস্কৃতির সুপরিচিত অনেক পুরনো ঐতিহ্য। আমাদের সেই শ্যামল গ্রাম, সেই নতুন বধূ সবই আছে। শুধু নেই কেবল পালকি।
পালকি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “পল্যঙ্ক” বা, “পর্যঙ্ক” থেকে। এর অর্থ বিছানা বা খাট। হিন্দী এবং বাংলা উভয় ভাষায় এটাকে পালকি বলা হয়ে থাকে। পালি ভাষায় একে “পালোঙ্ক” বলা হয়। এই যানকে কোন কোন জায়গায় ডুলি, শিবিকা এসব নামেও ডাকা হয়। পর্তুগীজরা এর নাম দিয়েছিলো পালাঙ্কুয়িন।রোমে লেটিকা, চীনে জিয়াও, ভিয়েতনামে কিউ, স্পেনে লিটারা, ফ্রান্সে পালানকুইন, পর্তুগালে লিটেইরা, থাইল্যান্ডে ওহ, কোরিয়ায় গামা, জাপানে নোরিমোনো, তুরস্কে টাহটিরেভান ইত্যাদি নামে পালকি পরিচিত হয়ে আসছে।
লন্ডনে পালকিকে সিড্যান চেয়ার বলে ডাকা হয়।পালকির ব্যবহার কখন কিভাবে এদেশে শুরু হয়ে ছিল তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি। রাজা, বাদশাহ, সুলতান, বেগম ও অভিজাতরা পালকিতে যাতায়াত করত। আর সে জন্যই পালকি অভিজাত শ্রেণীর বাহন হিসেবে গণ্য করা হত।
যুগ পাল্টে গেছে রাজা নেই বাদশাহ নেই, তাই পালকি ও বেহারাও নেই। আমাদের নতুন প্রজম্ম পালকি নামক মানুষের ঘাড়ে চড়া বসা কোনো বাহনের কথা বই-পুস্তকে পড়বে এবং লোক শিল্পের জাদুঘরে গিয়ে সাজানো গোছানে কৃত্রিম পালকি দেখবে।