অনলাইন ডেস্ক, ১৫ নভেম্বর।। চলচ্চিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে, ১৯৫৯ সালে। অবশ্য এর আগে একটি ছবিতে স্ক্রিনটেস্ট দিয়ে সফল হননি। ‘অপুর সংসার’-এর অপু হয়ে ভীষণ খ্যাতি পেয়েছেন সৌমিত্র।
একে একে সত্যজিতের ১৪টি ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন।নায়ক- পরিচালক পরিচয়ের বাইরে দুজনের মাঝে গভীর বন্ধন গড়ে ওঠে। সত্যজিৎকে নিয়ে ‘মানিকদার সঙ্গে’ নামে একটি বইও লিখেছিলেন সৌমিত্র, যার ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য মাস্টার অ্যান্ড আই’।
প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ করার পর যখন দ্বিতীয় ভাগ ‘অপরাজিত’ করবেন বলে কিশোর অপুর চরিত্রের জন্য একজনকে খুঁজছিলেন সত্যজিৎ। নির্মাতার পরিচিত একজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে তার কাছে যান। ওই সময় অভিনেতা মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সৌমিত্র স্মৃতিচারণে বিবিসিকে বলেছিলেন, “আমি তখন ওই কিশোর বয়সের অপুর পক্ষে বড়। আমাকে দেখামাত্র উনি বলেন- এহে আপনি তো বড্ড বড় হয়ে গেলেন।
যাই হোক, তার অনেক পরে যখন উনি তৃতীয় ভাগ- ‘অপুর সংসার’- করবেন বলে মনস্থির করেন, যেখানে যুবক অপুকে দরকার, তখন আমাকে খবর দেন। ” “আমি যাই এবং আরও অনেক পরে জেনেছিলাম যে মোটামুটি আমাকে দেখার পর উনি ঠিক করেছিলেন, তাহলে যুবক অপুর জন্য একজনকে পাওয়া যাবে এবং উনি স্থির করেন উনি তৃতীয় ভাগও করবেন। ” সত্যজিৎ যেমন ছবির খুঁটিনাটির ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন, তার সঙ্গে কাজ করা অভিনেতাদেরও একইভাবে তৈরি করে নিতেন। তার ঘনিষ্ঠ এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার বিবিসিকে জানান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লাইব্রেরিতে একটা পুরোনো খাতা তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন যেটি ছিল চারুলতা ছবির শুটিংয়ের সময়কার।
রবীন্দ্রনাথের সময় যে ধরনের হাতের লেখার চল ছিল, তা ফুটিয়ে তোলার জন্য সেখানে সাদা কাগজে সৌমিত্র কীভাবে অসংখ্যবার সে ধরনের লেখার অনুশীলন করেছিলেন তা দেখা যায় সেই খাতায়। সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন ছবির তিনি সফল নায়ক তো বটেই, কিন্তু ‘ফেলুদা’ চরিত্রের সুবাদে মানুষের কাছে আরেক নাম হয়ে যায় ‘ফেলুদা’।
৬ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এর পরের ৪০ দিন একের পর এক জটিলতার সঙ্গে লড়েছেন তিনি। শনিবার নাগাদ চিকিৎসকেরা সব আশা ছেড়ে দেন। আর রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সৌমিত্রর পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে।
তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে— অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে।