স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৩১ অক্টোবর।। ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি চরম অনাস্থা প্রকাশ করে পরিষেবা উন্নত করার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকৰ্ষণ করে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়েও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সাহস হয়নি। তাই, বাড়িতেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছি। সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব পত্র মারফত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার-কে ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সবিস্তারে জানিয়েছেন এবং আশ্বস্থ করেছেন চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিংবা বিভ্রান্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও বিরোধী উপনেতা-র চিঠি-তে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী-র আশ্বাসে বিরোধী-রা আশ্বস্থ হননি। বাদলবাবু মুখ্যমন্ত্রী-কে লেখা চিঠি-তে দাবি করেছেন, ত্রিপুরা-র জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাও অভূতপূর্ব অপ্রত্যাশিত অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। তিনি জানান, অতি সম্প্রতি পরীক্ষায় তাঁর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রধান হাসপাতালের ভেঙ্গে পড়া পরিবেশ-পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যাবার পরিবর্তে নিজ বাড়িতে নিভৃতে থেকে চিকিৎসা নেবার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে রাজ্যের অধিকাংশ কোভিড আক্রান্ত রােগীরা নিজ বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষভাবে জটিল শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত সমস্যাজনিত রােগীরা হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
তাঁর বক্তব্য, কোাভিড আক্রান্ত ছাড়াও অন্যান্য জটিল রােগে আক্রান্তরা প্রতিনিয়ত এই মর্মে অভিযােগ করছেন যে তাদের চিকিৎসায় যথাযথ গুরুত্ব ও নজর দেওয়া হচ্ছে না। পরিণতিতে ওই অংশের রােগীরাও অসহায় বোধ করছেন। বিরোধী উপনেতা-র কথায়, আসন্ন শীত মৌসুমে কোভিড আক্রমণ কোন স্তরে যাবে সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে উদ্বেগ প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজধানী দিল্লী সহ কোন কোন রাজ্যে কোভিড আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে চলেছে। ত্রিপুরার পরিস্থিতি বিভিন্ন কারণেই উদ্বেগজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। ফলে, শীত মৌসুমে ত্রিপুরার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এই মূহুর্তে অনুমান করতে না পারলেও মানুষের মধ্যে সঙ্গত কারণেই উদ্বেগ বৃদ্ধি হতে দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিষেবা অবস্থার বিভিন্ন দুর্বলতা দূর করে অতিদ্রুত এর উন্নতি সাধনে অবশ্যই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।সে মোতাবেক তাঁর পরামর্শ, পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুসারে রাজ্য, জেলা, মহকুমা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থায় প্রয়ােজনীয় ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্য সহায়ক কর্মী নিয়ােগ করা দরকার। এ-বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় এম বি বি এস কয়েকশত বেকার ডাক্তার যখন নিয়ােগের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করছেন তখন বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েকশত ডাক্তারের পদ দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য পড়ে থাকছে।
বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতে এটা চলতে দেওয়া উচিত হবে না। অবিলম্বে সময় নষ্ট না করে অ্যাডহক পদ্ধতিতে বেকার ডাক্তারদের নিয়ােগ করা দরকার বলে তিনি দাবি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, পরবর্তী সময়ে টি পি এস সি’র মাধ্যমে নিয়ােজিতদের প্রথা অনুযায়ী নিয়মিত করার ব্যবস্থা করা হোক। একই পদ্ধতি পূর্বতন সরকারের সময় অনুসরণ করা হতাে বলে তিনি জোর গলায় দাবি করেন।
সাথে যোগ করেন, তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকেই এই পরামর্শ দিচ্ছি। পূর্বতন দীর্ঘ সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং বর্তমান বিধায়ক তপন চক্রবর্তী মহাশয়ও অনুরূপ পরামর্শ দিয়েছেন, বলেন তিনি।তিনি মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, কিছুদিন আগেই বেকার এম বি বি এস ডাক্তারদের আপনার উদ্দেশ্যে প্রেরিত স্মারকপত্রে উল্লেখিত দাবী সমূহকে সমর্থন করে পূর্বর্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরােধী দলনেতা সঠিকভাবেই আপনাকে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরােধ জানিয়েছেন। তাই, ত্রিপুরা সরকার অবিলম্বে এ-বিষয়ে অবশ্যই সদর্থক কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
সাথে তিনি যোগ করেন, আলাদা আলাদাভাবে অর্থ দপ্তর থেকে অনুমােদন নিয়ে নার্স, প্যারামেডিকেল ওয়ার্কার ও মালটি পারপাস ওয়ার্কার-এর কয়েকশত পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বিগত বিধানসভা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সেই পদ সমূহে নিয়ােগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আজকের দিনে এ সমস্ত পদগুলি অত্যন্ত প্রয়ােজন এবং তাই এই পদগুলিতেও দ্রুত নিয়ােগের জন্য তিনি অনুরােধ জানিয়েছেন।