মাছ চাষে স্বনির্ভরতার পথে বাঁশপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬০ জন নারী

৷৷ অমৃত দাস ৷৷ ১৫ অক্টোবর।। কাঁঠালিয়া ব্লকের বাঁশপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬০ জন নারী আজ সিপাহীজলা জেলায় এক বহু আলোচিত নাম৷ এই ৬০ জন মহিলা মিলে শুরু করেছেন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ৷ মাছ চাষে বায়োফ্লক পদ্ধতি ইতিমধ্যেই রাজ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও স্বনির্ভরতা ও রোজগার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষে এগিয়ে এসেছেন৷ তারই অন্যতম নিদর্শন কাঁঠালিয়া ব্লকের বাঁশপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ষাট জন মহিলা৷ তারা প্রথমে নীরমহল ভিলেজ ফেডারেশন গঠন করে মাছ চাষে এগিয়ে আসেন৷ বাঁশপুকুর গ্রাম প’ায়েতের মিঠু রুদ্রপাল, চামেলী কর্মকার, শেফালী দেবনাথরা আজ আর্থিকভাবে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে চলছেন৷ বাঁশপুকুর প’ায়েতের ৩০টি মহিলা স্বসহায়ক দলের ২ জন করে নির্বাচিত সদস্যকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল নীরমহল ভিলেজ ফেডারেশন৷ উদ্দেশ্য অগ্রগমনের পথকে সহজতর করা৷

সিপাহীজলা জেলায় তারাই প্রথম সম্পর্ণ নারী পরিচালিত সংস্থা, যারা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন৷ বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়নে উত্তর পূর্বা’ল গ্রামীণ জীবিকা প্রকল্পে প্রতিটি মহিলা স্বসহায়ক দলকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে৷ প্রাপ্ত অর্থ থেকে প্রতিটি স্বসহায়ক দল ১ লক্ষ টাকা করে নীরমহল ভিলেজ ফেডারেশনে জমা করে একটি তহবিল গঠন করেছেন৷ এই তহবিল থেকে ফেডারেশনের সদস্যাদের মধ্যে নির্দিষ্ট সুুদে অর্থ লগি করা হয়৷ উপার্জন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারা মাছের চাষ করছেন৷ ত্রিপুরাতে চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন কম৷ এছাড়া ত্রিপুরার বাজারে মাছের চাহিদা ব্যাপক এবং এই চাহিদা পূরণ করতে ব্যাপক পরিমানে মাছ আমদানি করা হচ্ছে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য থেকে৷ তারা সবদিক বিবেচনা করেই শুরু করলেন মাছ চাষ৷ এখন তাদের ফার্মে কই মাছের চাষ হচ্ছে৷ পোনা ছাড়ার ৩০ দিনের মধ্যে ৪০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করা হয়েছে৷ এখন তাদের ফার্মে আনুমানিক ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মাছ রয়েছে৷ প্রতিটি ১০ হাজার লিটার জলের টেঙ্কে ৪-৫ কুইন্টাল মাছ চাষ করা যায়৷

তিন মাসের মধ্যে মাছ বাজারজাত করার উপযুক্ত হয়ে যায়৷ ফেডারেশনের মহিলারা জানান খুব কম সময়ে এই পদ্ধতিতে অধিক লাভবান হওয়া যায়৷ প্রতিটি স্বসহায়ক দলের সদস্যা তাদের নিজস্ব বাড়িতে অন্তত ১টি করে টেঙ্ক করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন৷ মহিলা হয়েও মাছ চাষে তারা যে কাজ করেছেন তা এলাকাবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত৷ এলাকার পুরুষ মাছ চাষীরাও এখন তাদের কাছে আসছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কম জায়গায় বেশী পরিমান মাছ চাষ করা যায় দেখে ব্লক এলাকার অন্যান্য পঞ্চায়েত থেকে প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ ফেডারেশনের সদস্যা মিঠু রুদ্রপাল, চামেলী কর্মকার, প্রিয়াংকা রুদ্রপাল, শেফালী দেবনাথ বলেন, এই পদ্ধতি অবলম্বন করে মাছ চাষ করলে কোন মহিলাকে আর স্বামীর রোজগারের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে না৷ আমরাও আত্মনির্ভর হলে আমাদের ত্রিপুরাও আত্মনির্ভর হবে৷ মাছের জন্য অন্য দেশ বা রাজ্যের উপর নির্ভর হতে হবে না৷ পুরুষরা যে কাজটা করতে পারে আমরাও সেই কাজ করতে পারি৷ শুধু প্রয়োজন ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উদ্যম ও সদিচ্ছা৷

আমরা আগে ভাবতাম মহিলাদের দ্বারা এ কঠিন কাজ সম্ভব নয়, কিন্তু প্রবল ইচ্ছা শক্তি এবং সাহসিকতার উপর নির্ভর করে দেখেছি আমরাও পারি পুরুষের সাথে কাজের সঙ্গী হতে৷ শেফালী দেবনাথ এবং আয়েষা খাতুন মাছ চাষের পাশাপাশি দেশী মুরগীর ফার্ম করে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন৷ সুুচিত্রা রুদ্রপাল সব্জি চাষ এবং অলকা মিত্র কাপড়ের ব্যবসা করে সফল হয়েছেন৷ ব্লক এলাকায় নীরমহল ভিলেজ ফেডারেশন এখন সকলের কাছে দৃষ্টান্ত৷ এখন অনেকে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে খুব দ্রত স্বনির্ভর হওয়া যায় বলে আগ্রহ প্রকাশ করছেন৷ মিঠু রুদ্রপাল, চামেলী কর্মকার, প্রিয়াংকা রুদ্রপাল, শেফালী দেবনাথ আয়েষা খাতুন আজ সকলের অনুপ্রেরণা৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?