রাজ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়াবহ, স্বাস্থ্য অধিকর্তার কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাল সিপিএম

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৯ অক্টোবর।। রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রশাসনে কোনরকম হেলদোল না দেখে একাধিক দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বামেরা বিক্ষোভ, মিছিলের মতো কর্মসূচি গোটা শহরে সংঘটিত করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অবশেষে সেই বিক্ষোভ কর্মসূচি স্বাস্থ্য দপ্তরকে হুঁশিয়ারি দিতে স্বাস্থ্য অধিকর্তার অফিস পর্যন্ত পৌঁছাল। শুক্রবার সিপিআইএম পশ্চিম জেলা কমিটির উদ্যোগে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ গোর্খাবস্তিস্থিত স্বাস্থ্য অধিকর্তা কার্যালয় সম্মুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সিপিআইএম -এর পশ্চিম জেলা সম্পাদক পবিত্র কর। তিনি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রেখে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রাজ্য সরকারকে হু এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে লিখিত ভাবে পাঠালেও সরকার কোভিড স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সে মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার। মর্জি মাফিক রাজ্যের স্বাস্থ্যপরিসেবা পরিচালনা করছে বর্তমান সরকার। জিবি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ পরিষেবা নিতে জিবি যেতে ভয় পাচ্ছে। জিবি চত্বরে খোলা হয়েছে বিজেপি এক দলীয় অফিস। যা আরএসএস এবং বিজেপির কর্মীরা পরিচালনা করছে। আজ যদি এই দলীয় অফিসটি বন্ধ করা না হয় তাহলে মানুষ ভেঙ্গে দেবে সেই দলীয় অফিস। সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোন দায়িত্ব পালন করছে না।

তাই সিপিআইএম পশ্চিম জেলা কমিটির উদ্যোগে সাত দফা দাবিতে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দাবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবি হলো, রাজ্যে কোভিড তথ্য নিয়ে সরকারের লুকোচুরি খেলছে। সরকার করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেখাচ্ছে ৩০৬ জন। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩১২ জনের। এর প্রমাণ রয়েছে রাজ্যে বিরোধী দলের কাছে। অথাৎ কোভিড তথ্য নিয়ে লুকোচুরি করা যাবে না। সঠিক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।

রাজ্যে কোভিড টেস্ট পর্যাপ্তভাবে হচ্ছে না। রেল এবং বিমানে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এতে সংক্রমণ বাড়ছে। রেল এবং বিমানে আসা প্রত্যেক যাত্রীর করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে সরকারকে। প্রত্যেক করোনা মৃত পরিবারকে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ লক্ষ টাকা করে প্রদান করতে হবে। এবং গত ২৮ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকবে তাদের দেড় হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে। কিন্তু রাজ্যে হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীরা সরকারের দেড় হাজার টাকার সুবিধা পাচ্ছেন না বলেই চলে।

সরকারকে ঘোষণা মোতাবেক হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের মধ্যে দেড় হাজার টাকা করে প্রত্যেককে প্রদান করতে হবে। সরকারকে এই ৭ দফা দাবিগুলি অবিলম্বে পূরণ করতেই হবে। কিন্তু সরকার ভাবছে মানুষের চোখে ধুলো দেবে। কিন্তু তা বিরোধীরা হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন পশ্চিম জেলা সম্পাদক পবিত্র কর। তিনি আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য কলাপাতার বলা যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্য দপ্তরে প্রথম সারির যোদ্ধাদের ১৪ হাজার টাকা করে দেওয়ার যে ঘোষণা করেছিল সরকার তা প্রথম সারির যোদ্ধাদের এখনো মিলছে না। উপরন্তু চলছে স্বাস্থ্য দপ্তরের অমানবিক বদলি। যা রাজ্যের মানুষ মেনে নিতে পারছে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।অবশেষে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভাশিষ দেববর্মা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার নেতৃত্বদের কার্যালয়ে ভিতরে গিয়ে দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ডাকেন।

অধিকর্তা আহবানে সাড়া দিয়ে পশ্চিম জেলার সম্পাদক পবিত্র কর, জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য শুভাশিস গাঙ্গুলী, অমল চক্রবর্তী সহ পাঁচজন একটি প্রতিনিধি দল অধিকর্তার সাথে দেখা করে সাতটি দাবি তুলে ধরেন। পরে অধিকর্তার সাথে আলোচনা পর জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য শুভাশিস গাঙ্গুলী জানান, রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। রেল এবং বিমান যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা, হোম আইসোলেশনে থাকা সমস্ত করোনা রোগীদের দেড় হাজার টাকা করে প্রদান করা, মৃত করোনা রোগীদের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে, জিবি হাসপাতাল চত্বর থেকে বিজেপি এবং আরএসএস কর্মীদের দলীয় অফিস তুলে নেওয়া সহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

অধিকর্তা শুভাশিস দেববর্মা বলেছেন দাবিগুলি কাগজে-কলমে মাধ্যমে লিখে জমা দেওয়ার জন্য। বিষয়গুলো নিয়ে উপর মহলের সাথে আলোচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অধিকর্তা। দাবিগুলো যদি পূরণ না হয় তাহলে আগামী দিনের বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?