স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৫ অক্টোবর।। সড়ক পথে এবং নদী পথে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ওই পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু, ত্রিপুরার ব্যবসায়ী মহল তা লাভজনক বলে এখনও মনে করছেন না। বরং, রেল-এ পণ্য আনতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। কারণ, তাতে খরচ কম লাগছে। এ-বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকায় নবনিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দুরাইস্বামী-র দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ত্রিপুরা মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এম এল দেবনাথ। পাশাপাশি, বাংলাদেশ-এ পণ্য রফতানি-তে শুল্ক কমানোর বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। দুই দিনের ত্রিপুরা সফর শেষে আজ আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ রওয়ানা দিয়েছেন বিক্রম দুরাইস্বামী।
তিনি আজ বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের দায়িত্ব নেবেন। যাওয়ার আগে ত্রিপুরার ব্যবসায়ী মহলের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। এ-বিষয়ে মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এম এল দেবনাথ জানিয়েছেন, ত্রিপুরা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫৫০ কোটি-র অধিক মূল্যের পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করছে। কারণ, ভারত সরকার শুল্ক কম রাখায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হচ্ছেন এবং আমদানিও বাড়ছে। কিন্তু, ত্রিপুরা থেকে সাকুল্যে ১ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য বাংলাদেশে রফতানি সম্ভব হচ্ছে। এ-বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, রফতানি শুল্ক অত্যাধিক হওয়ায় ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পণ্য পাঠাতে আগ্রহী নন।তাঁর কথায়, চা, ফুলঝাড়ু, ধূপকাঠি ত্রিপুরা থেকে প্রচুর পরিমানে বাংলাদেশে রফতানি সম্ভব।
কিন্তু, অত্যাধিক শুল্ক আরোপ থাকায় বাংলাদেশে রফতানি করা যাচ্ছে। তিনি বিক্রম দুরাইস্বামী-র কাছে এ-বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রফতানি শুল্ক কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন। তাতে, ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে উপকৃত হবেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান বাড়বে।এদিকে, বাংলাদেশ থেকে মাছ আমদানি-তে ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যার কথা বিক্রম দুরাইস্বামী-র কাছে তুলে ধরেছেন ত্রিপুরা মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ওয়ে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে রয়েছে। তাতে, ত্রিপুরায় মাছ ঢোকার পর এখন থেকে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে পাঠাতে হচ্ছে। তারপর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ-ক্ষেত্রে অনেকটা সময় অহেতুক অপচয় হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে বিক্রম বাবু জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে এ-বিষয়ে তিনি কথা বলবেন।
তাতে, অধিক বিলম্ব হলে ভারতীয় হাই কমিশন থেকে একটি ওয়ে মেশিন উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।এদিন, সড়ক এবং নদী পথে পণ্য আমদানি-র বিষয়টি এখনো অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয় বলে দাবি করেছেন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে হলদিয়া থেকে চিটাগাং বন্দর এবং সেখান থেকে সড়ক পথে পণ্য আমদানি হয়েছে। তাছাড়া, নদীপথেও দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়া পর্যন্ত পণ্য আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু, উভয় ক্ষেত্রেই আর্থিক দিক দিয়ে ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ার কোন বিষয় নজরে আসেনি। তাঁর দাবি, ত্রিপুরা এখন রেলপথে যোগাযোগ অনেক উন্নত হয়েছে। ব্রডগেজ লাইনে পণ্যবাহী ট্রেনে প্রচুর পণ্য আনা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দিয়ে পণ্য আমদানি-তে আর্থিকভাবে লাভবান না হলে ব্যবসায়ীরা উৎসাহ দেখবেন না। তিনি বিক্রম দুরাইস্বামী-র কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে চিটাগাং বন্দর হয়ে ত্রিপুরায় সড়ক পথে ১ দিনের মধ্যে পণ্য আমদানি সম্ভব করে দিন। তবেই, পরিবহন খরচে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।এদিকে, ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে যাতায়াতে অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারতীয় হাই কমিশনারের কাজে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে যাতায়াত করতে পারলেই ব্যবসায় লাভবান হবেন। কিন্তু, করোনা-র প্রকোপে সাধারণ মানুষের সাথে ব্যবসায়ীদের যাতায়াতেও বিধিনিষেধ রয়েছে। এ-বিষয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার সহমত পোষণ করেছেন বলে মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি জানিয়েছেন।