স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৩ সেপ্টেম্বর।।চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে আজ কেঁপেছে রাজধানী শহর আগরতলা। তাঁদের মহাকরণ অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন পুরুষ-মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মহাকরণের প্রধান ফটকের বাইরে আন্দোলনকারীদের উপর জল কামান ছুড়েছে পুলিশ। তবুও তাদের থামানো যায়নি। সকাল থেকে মহাকরণের প্রধান ফটকের বাইরে এয়ারপোর্ট রোডে ধর্নায় বসেছেন তাঁরা। তাঁদের ক্ষতে মলম লাগাতে ছুটে গেছেন বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযুষ কান্তি বিশ্বাস। এদিকে, আন্দোলনকারীদের এক প্রতিনিধি দল মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় মিলিত হয়েছেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-রা ১০৩২৩-র জন্য ন্যায় ব্যানারে মহাকরণ অভিযান করেন। আগরতলায় উত্তর গেইট এলাকা থেকে মিছিল করে তাঁরা মহাকরণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে তাঁদের সার্কিট হাউসে পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, পুলিশের সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে দিয়ে তাঁরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের থামাতে না পেরে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করেন। তাতে মহিলা-পুরুষ সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ, টিএসআর এবং সিআরপিএফ-র রুদ্র রূপ দেখেও চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা দমে যাননি। তারা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথে শ্রী কৃষ্ণ মিশন স্কুল এবং গোয়ালাবস্তির সামনে তাঁদের আটকানো-র চেষ্টা করেছে পুলিশ। জল কামান নিয়ে এসেও কোন পুলিশের লাভ হয়নি। এদিন সহস্রাধিক চাকুরিচ্যুত শিক্ষক মহাকরণ-র প্রধান ফটকের বাইরে রাস্তায় ধর্নায় বসে পড়েন।
খবর পেয়ে ছুটে গেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী বলেন, ১০৩২৩ শিক্ষকদের চাকুরীর ব্যবস্থায় বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর কথায়, ১৩০০০ অশিক্ষক পদে নিয়োগে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের অনেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ওই পদগুলি বাতিল হয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ চ্যাকরিচ্যূত পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের খবর জানিয়েছেন। তাঁদের বয়সে এককালীন ছাড় এবং এবং সরকারি চাকুরীর সুযোগ নিতে ব্যর্থ হলে আউট সোর্চিং-র মাধ্যমে নিয়োগের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু, ত্রিপুরা সরকারের ওই ঘোষণায় মোটেও আশ্বস্থ হননি চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা।
এদিন চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন-কে সমর্থন জানাতে গিয়ে বিরোধী উপনেতা বলেন, সকলের চাকুরী দিতে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর কথায়, বামফ্রন্ট সরকার ১৩০০০ অশিক্ষক পদ সৃষ্টি করেছিল চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য। কিন্তু, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ওই পদগুলি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট অশিক্ষক পদে নিয়োগে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করবি। বরং, বয়সে ছাড় দিয়ে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের বাড়তি সুযোগ করেছেন। বাদল বাবুর মতে, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তনে ১০৩২৩ শিক্ষক-রা অন্যতম কান্ডারি ছিলেন।
এখন তারাই আবারো সরকার পরিবর্তনে কান্ডারি হবেন। এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও আন্দোলনস্থলে গিয়ে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমে বামফ্রন্ট সরকার এবং এখন বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করছে। তাঁদের চাকুরী নিশ্চিত করতেই হবে। এদিকে, আজকের আন্দোলনে বিষ্ময়ের ব্যাপার হল, জনজাতি অংশের চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা চাকুরীর বন্দোবস্ত না হলে অন্য পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন এবং তার জন্য বিজেপি সরকার দায়ী থাকবে বলে সতর্ক করেছে। জনৈক শিক্ষক বলেন, চাকুরী না পেলে জনজাতি অংশের চাকুরিচ্যুত-রা উগ্রপন্থার পথ বেছে নিতে পারেন। কারণ, জীবন-জীবিকার প্রশ্নে আমাদের কাছে অন্য কোন পথ খোলা থাকছে না। এদিন, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের এক প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথের আলোচনা করতে গিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তারা আলোচনা করছেন।