অনলাইন ডেস্ক, ৭ সেপ্টেম্বর ।। গবেষণাধর্মী কাজের বিস্তারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ওপর বিনিয়োগের মাত্রা আরও বেশি করার আহ্বান করেছেন।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে সব কটি রাজ্যের রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের সম্বোধন করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানিয়েছেন, উদ্ভাবন এবং গবেষণাধর্মী কাজের ওপর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির উচিত বিনিয়োগের মাত্রা বাড়ানো। পরিসংখ্যান তুলে ধরে নিজের হতাশা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপির ২.৮ শতাংশ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়, ইজরায়েলে এই হার ৪.৩ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪.২ শতাংশ সেখানে ভারতে জিডিপির মাত্র ০.৭ শতাংশ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। তাই সকল কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির উচিত জিডিপির ছয় শতাংশ শিক্ষা খাতে খরচ করা। জীবন্ত গণতন্ত্রে সার্বজনীন শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে ২০২০ দেশের আর্থিক দিক দিয়ে প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, সমাজে আর্থিক এবং সামাজিকভাবে বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষদের এই শিক্ষানীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সকল শিশুদের প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদান এবং অংক কষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি সফলভাবে প্রতিটি রাজ্যের কার্যকর করতে রাজ্যপালেরদের ভূমিকা অপরিসীম তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানিয়েছেন, রাজ্যপালরা রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। ফলে নতুন শিক্ষানীতি সঠিক উপায়ে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার বিশেষ ভূমিকা রাজ্যপালের রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যপালের উচিত নিজের রাজ্যে গিয়ে ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করা।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকরা মূল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সেই দিকে ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের ভূমিকা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থাকবে। যোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হবে। ২০২১ সালে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাপক পাঠক্রম তৈরি করা হবে। নতুন শিক্ষানীতি দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছিল। দেশের ৬৭৫টি জেলা থেকে প্রাপ্ত দু লাখ এরও বেশি পরামর্শ এসেছিল শিক্ষানীতি তৈরি করার সময়। এই শিক্ষানীতি কেবল নীতিগত নথিপত্র নয়।
ভারতের শিক্ষার্থীদের এবং নাগরিকদের আশা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। যদি সঠিকভাবে এই শিক্ষা নীতি কার্যকর করা হয় তবে ভারত শিক্ষাক্ষেত্রে মহা শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। রাষ্ট্রপতি আরও জানিয়েছেন, বৃত্তিমূলক শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় ভারত অনেক পিছিয়ে আছে। ভারতের মোট কর্মশক্তির মাত্র পাঁচ শতাংশ এই বৃত্তিমূলক শিক্ষা পেয়েছে। ফলে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব নতুন শিক্ষানীতিতে দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৫০ শতাংশ পড়ুয়াদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা (ভোকেশনাল ট্রেনিং) দেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা যে মাতৃভাষাতেই হবে তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষানীতিতে ত্রিভাষা সূত্রের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং কৃষ্টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ছোট বয়স থেকে শিশুমনে দেশের প্রতি একতা, অখণ্ডতার জ্ঞান জাগ্রত হবে এর মাধ্যমে। ২০৩০ মধ্যে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার আঙিনা থেকে যাতে কোনো নাগরিক বাদ না যায় তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।