৷৷প্রসেনজিৎ চৌধুরী৷৷ আগরতলা, ২৫ আগস্ট।।সৃষ্টির আনন্দে, ইচ্ছা আর প্রত্যয়ে মানুষ অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে৷ নতুন কিছুর সৃষ্টির উৎসাহ ও সাফল্যই কোন ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে পারে আলোর বৃত্তে৷ কাজের সার্থকতা তখনই মেলে যখন তা পরিবার ও দশের কল্যাণে সমাদৃত হয়৷ বি’ান ও প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেও গড়ে তোলা যায় সাফল্যের নতুন পথ৷ ঠিক এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাজধানী শহর থেকে ৪৫ কিমি দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত গ্রাম বক্ষকুণ্ডের মতাই এলাকার বর্গাচাষী ভবেন্দ্র দেবনাথ৷ তিনি ক’ষক পরিবারেরই বর্তমান প্রজন্ম৷ আর্থিক দৈন্যতার জন্য পড়াশুনা যথেষ্ঠ না এগুলেও ক’ষিকাজে নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তিনি৷
ভবেন্দ্রবাবুর নিজস্ব কোন জমি নেই৷ এলাকার সীমান্ত লাগোয়া বিস্তীর্ণ ঐ ক’ষিভূমিতে মোট ৪ কানি জমি বর্গাতে চাষাবাদ করছেন তিনি৷ গড়ে তুলেছেন প্রযুক্তি নির্ভর ও বি’ান ভিত্তিক এক স্বপের ক’ষি ভূমি৷ হালকা ছিপছিপে গড়নের বছর ৩৭ এর ভবেন্দ্রবাবুকে দেখলে বিশ্বাস করাই মুশকিল, যে তিনি একার কায়িক শ্রম, মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন৷ তার এই জমিতে মরিচ, লাউ, শিম, বরবটি, ঢেঁরস, টমেটো সহ আরও অনেক সব্জি চাষেও উদ্ভাবনী পন্থা অবলম্বন করেছেন৷ তাঁর এই ফসলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি নজর কাড়ে তা হল সুুস্বাদু ও রসালো ফল তরমুজের ফলন৷ গ্রীমকালীন এই রসালো ফল, এই ভরা বর্ষা মরশুমেও প্রচুর পরিমাণে ধরে রয়েছে তার মাচায়৷
সাধারণত তরমুজ মাটিতে হয়৷
কিন্তু ভবেন্দ্রবাবুর এই তরমুজ কনকাইচ বাঁশ দিয়ে নির্মিত ঈগলু সদৃশ্য মাচানের উপর ফলেছে৷ তরমুজ চাষের এই পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, চাষের এই পদ্ধতি তিনি ইন্টারনেট থেকে আহরণ করেছেন৷ মোট ৮ গণ্ডা জমির উপর প্রথমবারের মত এই তরমুজ চাষ করেছেন৷ বর্তমানে মোট ৭টি মাচান রয়েছে৷ তিনি আরও জানান, ভালো ফলনের জন্য সবসময়ই তিনি বীজতলা মালচিং সীট দিয়ে মুড়ে দেন৷ শুধুমাত্র যে জায়গায় চারাগাছগুলো রয়েছে সেখেনে ৩-৪ ইি’ ফুটো করে দেন৷ এরফলে যেমন আগাছা কম জন্ম নেয়, শ্রমিক খরচাও অনেকটা কম হয়৷
গাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়, জলসেচের প্রয়োজন যায় কমে অর্থাৎ খরচ ও পরিশ্রম অনেকটাই সাশ্রয় হয়৷ বর্তমানে তরমুজের ফলন নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, প্রায় ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি এই তরমুজ ক্ষেত করেছেন৷ বর্তমানে তার সাতটি মাচায় প্রায় দেড় হাজারের মত ছোট বড় আকারের তরমুজ রয়েছে৷ এন এস-৩৪ প্রজাতির এই তরমুজ ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে৷ এখন এই তরমুজের প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ৫০ টাকা৷ এই তরমুজের ফলন ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়৷ হিসাব করলে দেখা যায় তিন মাসেরও কম সময়ে এই জমি থেকে তিনি প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবেন৷ তার এই উদ্যোগে সরকারি সহায়তা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানান, যখনই প্রয়োজন পড়েছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের কর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছেন৷
ভবেন্দ্রবাবুর এই উদ্ভাবনী পন্থা ও ফলন দেখে এলাকার আরও ৪-৫ জন উদ্যমী ক’ষক উৎসাহী হয়েছেন৷ তার থেকে এই চাষ পদ্ধতি জানার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন৷ বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে বিবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে সহযোগিতা করছে৷ ভিন্নধর্মী ফল ও সব্জির চাষ দিন দিন রাজ্যে বেড়েই চলেছে৷ স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন বহু শিক্ষিত, উদ্যমী যুবক৷ বর্তমানে ’ ও এক কন্যা নিয়ে ভবেন্দ্র দেবনাথ স্বচ্ছল জীবনযাপন করেছেন৷
রাজ্যে প্রচুর অনাবাদী জমি রয়েছে৷ এগুলিকে ব্যবহার করে বেকার যুবক-যুবতীরা অল্প খরচে প্রচুর উপার্জন করতে পারেন৷ এরকম চাষের প্রচুর সুুযোগও রয়েছে রাজ্যে৷
[contact-form][contact-field label=”Name” type=”name” required=”true” /][contact-field label=”Email” type=”email” required=”true” /][contact-field label=”Website” type=”url” /][contact-field label=”Message” type=”textarea” /][/contact-form]
সেক্ষেত্রে অসময়ের তরমুজ বা অন্য ফসলের চাষ রাজ্যের বুকে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে৷ সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে উদ্যমী ভবেন্দ্র দেবনাথের এই অভিনব পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের উদ্যোগ রাজ্যের কৃষকদেরও উৎসাহিত করবে৷ প্রক’তপক্ষে তার মত কৃষকই স্বনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার প্রেরণা হয়ে উঠতে পারেন৷