স্টাফ রিপোর্টার আগরতলা, ২৪ আগস্ট।। করোনায় সর্বোচ্চ ঝুঁকির দিকে এগিয়ে চলেছে ত্রিপুরা। এখনই মানুষ সতর্ক না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। আজ আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে কাউন্সিল হলে সাংবাদিক সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানালেন স্টেট লেভেল কোভিড কোর কমিটির সদস্যরা। কমিটির তিন সদস্যের দাবি, সর্বোচ্চ হারে নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্তের সন্ধানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হবে। নয়তো, অক্টোবরে করোনা-র প্রকোপ ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা সাধ্যের মধ্যে থাকবে না।
করোনা-র প্রকোপের লাগামহীন বৃদ্ধি ত্রিপুরা-কে নতুনভাবে দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে। ফলে, আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। সাথে ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি স্থির করেছেন। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কোর কমিটির সদস্য প্রফেসর ডঃ সুব্রত বৈদ্য বলেন, অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত-রা করোনা-য় মারা যাচ্ছেন। সাথে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় দ্রুত গতিতে করোনা-র প্রকোপ বেড়ে চলেছে।
তাঁর কথায়, করোনা আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষা-য় টালবাহানা এবং হাসপাতালে যাওয়ার ভীতি মৃত্যুর জন্য অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিন কোর কমিটির অপর সদস্য মাইক্রো বায়োলজিস্ট ডঃ তপন মজুমদার বলেন, ত্রিপুরায় গত ১ সপ্তাহে সংক্রমিতের হার ৯-১০ শতাংশ। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংক্রমিতের হার ৫ শতাংশ-র মধ্যে রাখা খুবই জরুরি। তিনি গভীর চিন্তা প্রকাশ করে বলেন, সংক্রমিতের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে।
সাথে তিনি যোগ করেন, অক্টোবরের মধ্যে সংক্রমণ না কমলে পরিস্থিতি মোকাবিলা সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, করোনা মোকাবিলায় মানুষ সহযোগিতা করছেন না। সংক্রমণ চেপে রাখায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর দাবি, বাড়ি বাড়ি সমীক্ষায় মানুষ মোটেও সহযোগিতা করেননি। কারণ, ওই সমীক্ষার পর এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। তাঁর কথায়, সারা দেশে ৩২ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হচ্ছে।
সেই তুলনায় ত্রিপুরায় ৩১.৫ দিনে করোনা আক্রান্ত দ্বিগুন হচ্ছে। তাঁর দাবি, প্রতিদিন ত্রিপুরায় ৩.৩ শতাংশ হারে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে। তাতে, অক্টোবরে সংক্রমণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌছাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ত্রিপুরা সরকার আরো বেশি নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডঃ তপন বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রিপুরায় নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো হবে। অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে হবে। সে-ক্ষেত্রে ১৫ সেপ্টেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ত্রিপুরায় এন্টিবডি টেস্টের তোড়জোড় চলছে।
তাঁর মতে, করোনা-র টিকা সহজে মিলবে না। উচ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন-দের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, ত্রিপুরায় প্লাজমা থ্যারাপির পরিকল্পনা চলছে। এদিন তিনি সাফ জানিয়েছেন, দেশে করোনা-র বিদায়বেলায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রকোপ বাড়ছে। সে-ক্ষেত্রে দুর্গোৎসব কিভাবে পালন করা হবে সে-বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন নির্দেশিকা জারি করতে হবে।
এদিকে, করোনা-র চিকিৎসায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা-র ব্যবস্থা এবং অক্সিজেনের ঘাটতি মেটানো হয়েছে। ডঃ রাজেশ দেববর্মা বলেন, শুধুমাত্র করোনা-য় জটিল রোগীদের চিকিৎসা হবে জি বি হাসপাতালে। বাকি, লক্ষণহীন, সামান্য আক্রান্তদের ভগৎ সিং এবং হাপানিয়া মেলা প্রাঙ্গনে কোভিড কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা হবে। সেখানেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকবে।