স্টাফ রিপোর্টার, কদমতলা, ২৩ আগস্ট।। কদমতলা হাসপাতালের সামনে থেকে দিন দুপুরে চুরি যাওয়া সুপার স্প্লেন্ডার বাইকটিকে ১৬ দিনের মাথায় উদ্ধার করল কদমতলা থানার পুলিশ।সাথে উদ্ধার অপর একটি নম্বরবিহীন পালসার বাইক। আটক অসমের পাতারকান্দি এলাকার কুখ্যাত বাইক পাচার চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড কামাল উদ্দিন (৩২)। উভয় সীমান্তজুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ৭ আগস্ট উত্তর জেলার কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আশীষ শব্দকর পিতা মৃত মনমোহন শব্দকর দুপুর ৩ টা নাগাদ উনার TR05/8298 নম্বরের লাল রঙের সুপার স্প্লেন্ডার বাইক দিয়ে কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ডিউটিতে আসেন।বাইকটি হাসপাতালের সামনে রেখে হাসপাতালের কাজে লেগে পড়েন। তারপর ১৫/২০ মিনিট পর হাসপাতালের সামনে এসে দেখতে পান উনার নিজের বাইকটি নেই।
বাইকটি না পেয়ে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে ধরা পড়ে এক যুবক বাইকটি চালিয়ে হাসপাতালের ভেতর থেকে বেরিয়ে ধর্মনগর সড়ক দিকে চলে যাচ্ছে।তড়িঘড়ি বাইক মালিক আশিষ শব্দকর ও কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ইনচার্জ পৃথকভাবে দুটি বাইক চুরির মামলা কদমতলা থানার রুজু করেন।কদমতলা থানার পুলিশ KDL/PS/42/2020 ভারতীয় দণ্ডবিধির 379 ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে কদমতলা থানা এলাকা থেকে রুহুল আমিন কৈলাস শহরের বাসিন্দা, দীপক নাথ কদমতলার বাসিন্দা ও আকাশ মিয়া ধলাইর মনুর বাসিন্দাকে আটক করে।
তার রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৫ আগষ্ট ধর্মনগর থানাধীন পশ্চিম চন্দ্রপুরের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল শহিদ পিতা আব্দুল রাজ্জাকের TR05A/8177 নম্বরের BAJAJ কোম্পানির পালসার বাইক ধর্মনগর নোয়াপাড়াস্থিত কদমতলা ধর্মনগর সড়কের পাশ থেকে দিন দুপুরে চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। তড়িঘড়ি বাইকের মালিক আব্দুল শহীদ ধর্মনগর থানায় বাইক চুরির মামলা দায়ের করেন। ধর্মনগর থানা DMR/PS/92/2020 ভারতীয় দণ্ডবিধির 379/32 ধরার মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে পড়ে।
ওই দিন সন্ধ্যেবেলা কদমতলা থানার পুলিশ প্রেমতলা এলাকায় স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় চুরি যাওয়া লাল রঙের পালসার বাইকটিকে ধাওয়া করে বাইকে থাকা তিন যুবকের মধ্যে পেছনে থাকা রিতেশ সাহানি পিতা শঙ্কর সাহানী নামের যুবককে আটক করতে সক্ষম হন। তার বাড়ি চুরাইবাড়ি থানাধীন রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায়।ধৃত রিতেশ সাহানিকে কদমতলা থানার পুলিশ তাদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে বাইক চুরির কথা অকপটে স্বীকার করে।কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে অপর দুই যুবক বাইক নিয়ে চোরাপথে আসামে প্রবেশ করে ফেলে।
কদমতলা থানার পুলিশ আসামের কাঠালতলী ও পাতারকান্দি থানাকে বিষয়টি জানায়। তথাপি পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসমের করিমগঞ্জ জেলার চাঁদখিরা ফাঁড়ি থানার পুলিশ দুই যুবক সহ TR05A/8177 নম্বরের পালসার বাইক আটক করে।আটক করা হয় ২ বাইক চোর নদিয়া ছন্দ (১৯) এবং আস্কর আলীকে (১৮)।পরে চুরি যাওয়া বাইক সহ ৩ কুখ্যাত বাইক চোরকে ধর্মনগর থানার পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু করে দেয়। কদমতলা ও ধর্মনগর থানায় পৃথক দুটি বাইক চুরির মামলায় আটকাধীন ৬ কুখ্যাত বাইক চোরকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে কদমতলা হাসপাতালে সামনেথেকে সুপার স্প্লেন্ডার বাইকটি রুহুল আমিন নামের যুবক চুরি করে এবং তার সাথে বাকি সকলেই যুক্ত।
তবে আটকাধীন ৬ জনের মধ্যে মূল মাস্টারমাইন্ড আস্কর আলী বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায়। তারপর গত ২১ আগস্ট কদমতলা থানার 92 নম্বরের বাইক চুরি মামলার তদন্তকারী অফিসার অপু দাস আস্কর আলীকে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে জানতে পারেন যে, চুরি যাওয়া সুপার স্পেন্ডার বাইকটি পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসমের পাতারকান্দি এলাকায় পাচার করেছে।
ধৃত বাইক চোর আস্কর আলীর জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে আজ ভোর রাতে অসমের করিমগঞ্জ জেলার পাতারকান্দির কিলোবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া সুপার স্পেন্ডার বাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয় কদমতলা থানার পুলিশ। সাথে উদ্ধার করা হয় অপর একটি নীল রঙের নাম্বার বিহীন পালসার বাইক। সাথে আটক করা হয় আন্তঃরাজ্য বাইক চুরি চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড কামাল উদ্দিন (৩২) পিতা-মৃত আসিদ আলি। পাতারকান্দি থানাধীন কিলোবন এলাকার বাসিন্দাকে।
বর্তমানে আন্তঃরাজ্য বাইক চুরি চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড কামাল উদ্দিন সহ চুরি যাওয়া সুপার স্প্লেন্ডার এবং নম্বর বিহীন পালসার বাইক কদমতলা থানা হেফাজতে রয়েছে। আজকের বাইক উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন তদন্তকারী অফিসার অপু দাস ও সাব-ইন্সপেক্টর বুদ্ধিমান দেববর্মা।তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পরপর তিনটি বাইক উদ্ধার এবং ৭ জন কুখ্যাত আন্তঃরাজ্য বাইক চোরকে আটক করতে কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। এই বাইক চোরের চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে উত্তর জেলায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলো।