নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জুন৷৷ রাজ্যের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে হবে৷ এজন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে৷ আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে স্বাস্থ্য দপ্তরের এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ আজকের সভায় মূলত জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজকর্ম, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, দপ্তরের সামগ্রিক অবস্থা এবং কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ তাছাড়াও বৈঠকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রতিটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ, জনসাধারণের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাসহ সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়৷পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা পরিষেবাকে সম্পসারিত করার জন্য বিশেষ’ চিকিৎসকদের প্রয়োজন অনুসারে জেলা হাসপাতালগুলিতে সময়ে সময়ে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ যাতে গ্রামীণ এলাকার মানুষও বিশেষ’ চিকিৎসকদের পরিষেবার সুুযোগ পেতে পারেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যাসপিরেশনাল জেলা ধলাইতে যে সকল সুকল কলেজের ছাত্রছাত্রীগণ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে নিযুক্তি পেয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ করছে তাদের ম্যালেরিয়া, রক্তাল্পতা, শিশু ম’ত্যু প্রতিরোধ সহ নানা কাজে লাগানো যেতে পারে৷ ধলাই জেলাকে মডেল হিসাবে ধরে পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করতে তিনি সভায় পরামর্শ দেন৷ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের দায়িত্ব স্থির করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিধান সংক্রান্ত যে সকল জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় তার মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন৷ গ্রামীণ মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে আশাকর্মীরা যাতে যথাযথ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে তার জন্য দপ্তরকে আরো উদ্যোগ নেবার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে অসমাপ্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কাজগুলি দ্রত সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি পরীক্ষাগারগুলিকেও উন্নত করার উপর জোর দেন তিনি৷ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে স্বাস্থ্য সুুরক্ষা বিষয়ক সচেতনতামূলক ফ্লে’গুলিকে আরও কিভাবে সাধারণের কাছে আকর্ষণীয় করা যায় সে বিষয়ে দপ্তরকে উদ্যোগী হতে এবং বিমানবন্দরসহ জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডিজিটাল ফ্লে’ লাগানোর বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন৷ পর্যালোচনা সভায় স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ পর্যালোচনা বৈঠকে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের রূপায়ণ এবং এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশদভাবে অবহিত করেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য শাখার মিশন ডিরেক্টর ডাঃ সিদ্ধার্থ শিব যশোয়াল৷ তিনি জানান, গ্রামীণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিধান কমিটির সদস্যদের যুক্ত করে রাজ্যের ৮টি জেলায় স্বাস্থ্য সুুরক্ষা প্রকল্প বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এছাড়া ককবরক এবং বাংলায় জনসচেতনতামূলক লিফলেট রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিলি করা হয়েছে৷ সভায় রাজ্যে শিশু ম’ত্যুর হার নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়৷ সভায় জনানো হয় শিশু ম’ত্যু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে এ জি এম সি এবং জি বি হাসপাতাল, গোমতী, খোয়াই এবং ধলাই জেলা হাসপাতালসহ টি এম সিতে মোট ৬টি এস এন সি ইউ চালু করা হয়েছে৷চলতি অর্থবছরের ৩১ জলাই-র মধ্যে দক্ষিণ এবং উত্তর জেলায় এইরকম দুটি এস এন সি ইউ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, ২০১৯-২০ সালে ৪৭,১২০টি ভিলেজ হেলথ এবং নিউট্রিশন দিবসগুলিতে অংশ নিয়েছেন আশাকর্মীগণ৷ পাশাপাশি আশাকর্মীরা নবজাতক শিশুদের বাড়িও পরিদর্শন করেছেন৷ তিনি জানান ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টারে রূপান্তরিত করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী এই হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টারগুলিকে দ্রত চালু করতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ সভায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর জানান, ১৭০ জন কমিউনিটি হেলথ অফিসারকে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য প্রতিমাসে গড়ে ১২ হাজার টাকা করে ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সূচনা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্মী সহ আরোগ্য মিত্রদের মোট ১.৫০ কোটি টাকা ইনসেন্টিভ প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি জানান, ১১৫টি হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টারকে টেলি মেডিসিন পরিষেবার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এজন্য ঐ সেন্টারগুলির প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, চলতি অর্থ বছরে দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং ঊনকোটি জেলা হাসপাতালগুলিতে সিটিস্ক্যান পরিষেবা সম্পসারণের জন্য অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে৷ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ডায়লেসিস পরিষেবা খোয়াই এবং ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে চালু করার জন্যও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, রিয়াং শরণার্থী শিবিরে ১০জন নতুন আশাকর্মী দেওয়া হয়েছে৷ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর ২০১৯-২০ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন উদ্যোগ সমূহ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করতে গিয়ে জানান, ২০১৯-২০ সালে ৯৩.৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়েছে৷ ম্যালেরিয়া সনাক্তকরণে চলতি বছরের এপ্রিল এবং মে মাসে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৯৩ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে৷ চলতি বছরে ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৬৬টি ঔষধীযুক্ত মশারী সুুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে৷ চলতি বছরের ৩১ আগষ্টের মধ্যে একাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও নিয়মিত টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে৷