নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুন৷৷ করোনা-র প্রকোপে কাঁপছে গোটা বিশ্ব৷ তাই, ত্রিপুরায় ছাত্র-ছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলিতে যথাযথভাবে পানীয় জলের এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা রয়েছে কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার জন্যও শিক্ষাদপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ আজ সচিবালয়ের ১নং কনফারেন্স হলে শিক্ষাদপ্তরের পর্যালােচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এই নির্দেশ দিয়েছেন৷ পর্যালােচনা সভায় করােনা ভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা যাতে কোন ধরণের ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়েও আলােচনা করা হয়৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনের মাধ্যমে যে শিক্ষা প্রদান চলছে সে বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন মুখ্যমন্ত্রী৷পর্যালোচনা সভায় শিক্ষাদপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা জানান, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর নতুন দিশা নামে যে নতুন প্রকল্প চালু করেছিল তাতে রাজ্যের তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য এসেছে৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে তা সম্ভব হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে সারা রাজ্যে একই প্রশ্ণপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে৷ লকডাউন-র পূর্বেই বিদ্যালয়গুলিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়ে গেছে৷ শিক্ষা সচিব বলেন, করোনা-র প্রকোপে ফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় জেবি এবং এসবি-র মােট ২,৮৪৯টি বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা দপ্তর৷ এর মধ্যে ২,৫৪৫ টি বিদ্যালয়ের জন্য সমগ্র শিক্ষার মাধ্যমে ২৯ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ ১,০৭৮টি বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ণের জন্য পূর্তদপ্তরকে ইতিমধ্যেই ১৮ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে৷
এ-বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক এবং উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির মধ্যে যেখানে বিদ্যুৎ সংযােগ নেই সেই বিদ্যালয় গুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ বিদ্যালয়গুলিতে বিদ্যুতায়ণের ক্ষেত্রে তপশিলি জাতি এবং উপজাতি কল্যাণ কপর্োরেশন এবং বি এ ডি পি ফান্ড থেকে অর্থ ব্যয় করা যায় কিনা সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য শিক্ষাদপ্তরের সচিবকে পরামর্শ দেন তিনি৷ পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যে সমস্ত বিদ্যালয়ের পানীয় জলের সংযােগ নেই সেই বিদ্যালয়গুলিতে পানীয় জলের সংযােগ প্রদানের লক্ষ্যে পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শৌচালয় গুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উপর বিশেষ নজর রাখতে হবে৷ শিক্ষাদপ্তরের সচিব সভায় জানান, সম্প্রতি সিবিএসই রাজ্যের ২০টি বিদ্যালয়কে সিবিএসই-র অনুমােদন দিয়েছে৷ এরমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ৬টি বিদ্যালয় রয়েছে এবং বাকী ৭টি জেলার ২টি করে বিদ্যালয় রয়েছে৷ এই ২০টি বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে রং করা সহ আসবাবপত্র ক্রয়, লাইব্রেরী এবং ল্যাবরেটরীগুলির পরিকাঠামাের উন্নয়ন করা হয়েছে৷ এজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়কে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে৷শিক্ষা দপ্তরের সচিব উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় বলেন, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীনে রাজ্যে বর্তমানে ২২টি সাধারণ ডিগ্রী কলেজ রয়েছে৷ সেখানে মােট ৪৭ হাজার ২৪১ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে৷ রাজ্যে ১৫টি মহাবিদ্যালয় বর্তমানে ন্যাকের স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এছাড়াও রাজ্যে ৬টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ১টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৫টি প্রফেশনাল কলেজ এবং ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷ শিক্ষাসচিব আরও জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজ গুলিতে সেন্ট্রালাইজড অনলাইন অ্যাডমিশন পোর্টালের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করানোর ব্যাপারে দপ্তর পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনের মাধ্যমে কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে এবং ফি প্রদানও করবে অনলাইনে৷ সেই লক্ষ্যে মহাবিদ্যালয়গুলির অধ্যক্ষ এবং অ্যাডমিশন ইনচার্জদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে৷পর্যালােচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীনে রাজ্যে যতগুলি লাইব্রেরী রয়েছে সেগুলোর পরিকাঠামো আরও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ লাইব্রেরী গুলিতে পাঠকদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখাসহ পানীয় জল ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ পর্যালােচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, বিশ্বাস সচিব প্রশান্ত কুমার গােয়েল, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় এবং শিক্ষা দপ্তরের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷