নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুন৷৷ দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে আজ বুধবার দুপুরে করোনায় আক্রান্ত নিহত ব্যক্তির মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে৷ স্থানীয় জনগণের আপত্তিতে বটতলা মহাশ্মশানে গতকাল রাতে তাঁর শেষকৃত্য করা সম্ভব হয়নি৷ আজ সকালে বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ এবং বিধায়ক আশিসকুমার সাহা স্থানীয় জনতাকে বোঝান৷ মৃতদেহ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই, দুই বিধায়ক মিলে স্থানীয় জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন৷ এর পর তাঁরা ওই মৃতদেহ সৎকারে সম্মতি দেন৷প্রসঙ্গত, গতকাল দুপুরে ত্রিপুরায় করোনায় আক্রান্ত প্রথম মৃত্যু হয়েছে একজনের৷ চাচুবাজারের বাসিন্দা করোনা সংক্রমিতের গতকাল মৃত্যু হয়েছে৷তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগেই তিনি উচ্চরক্তচাপজনিত রোগে ভুগছিলেন৷ তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল৷ এদিকে, মৃত ব্যক্তির দেহ সৎকারের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়েছে৷ বটতলা মহাশ্মশানে মৃতদেহ সৎকার করতে দেওয়া হবে না বলে এলাকার কিছু লোক সোচ্চার হন৷ এদিন সন্ধ্যার পর মহাশ্মশানের মূল ফটকে তালা দিয়ে দেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে এলাকার পুরুষ মহিলা রাস্তা অবরোধ করে বসেন৷ তাঁদের বক্তব্য, বটতলা মহশ্মশানে মৃতদেহ সৎকার করেত দেওয়া হবে না৷ এর পর রাতে মৃতদেহ জিবি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এর আগেও এক করোনা আক্রান্ত আত্মঘাতী মহিলার মৃতদেহ সৎকার নিয়েও প্রশাসনকে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল৷স্থানীয় জনগণের বিরোধিতায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রীতিমতো বেকায়দায় পড়েন৷ কারফিউ জারি রয়েছে বলে মাইকিং করে সতর্ক করা হলেও অবরোধকারীরা সরে যাননি৷ তাঁদের বক্তব্য, করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকারে বের হওয়া ধোয়া থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে৷ তাই বটতলা মহাশ্মশানে সৎকার করা যাবে না৷আজ বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ, বিধায়ক আশিসকুমার সাহা এবং সদর মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে বটতলা মহাশ্মশানঘাটে রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহের সৎকার করা হয়েছে৷ তাঁরা মৃতদেহ সৎকারে বাঁধা সৃষ্টিকারী লোকজনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন৷ দুই বিধায়কের হস্তক্ষেপেও সমস্যার সমাধান করা রীতিমতো কঠিন হয়ে ওঠেছিল৷ এলাকার লোকজন রীতিমতো নাছোড়বান্দা ছিলেন, বটতলা মহাশ্মশানে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকার করা যাবে না বলে৷দুই বিধায়ক মিলে এলাকাবাসীদের বোঝানোর চেষ্টায় বলেন, করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকার করা হলে এলাকায় কোনওভাবেই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই৷ বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে বলেও তাঁদেরকে বুঝিয়েছেন তাঁরা৷ কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা ছেড়ে জনগণকে সহযোগিতা করার জন্য দুই বিধায়কই আহ্বান জানান৷ দীর্ঘক্ষণ বোঝানোর পর সমস্যার সমাধান হয়৷বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে তাঁদের পরিবারের লোকজন শোকাহত৷ তাঁরা একদিকে শোকাহত অন্যদিকে মৃতদেহ সৎকার করতে না পেরে আরও বিধবস্ত হয়ে পড়েছেন৷ তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য৷ তাঁর কথায়, যাঁরা বটতলা মহাশ্মশান ঘাটে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকার করতে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ৷ তাঁদের মধ্যে ভুল ধারণা থাকতেই পারে৷ সেই ভুল ধারণা দূর করার দায়িত্ব প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সকলের৷ তাঁর বক্তব্য, রাজধানী আগরতলা শহর এলাকায় এ-ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷শেষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বটতলা মহাশ্মশানঘাটে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকার করা হয়েছে৷ মৃতদেহ সৎকারের পর বটতলা মহাশ্মশান জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে৷ পুর নিগমের কর্মীরা শ্মশান চত্বরে জীবাণুনাশক ছড়িয়েছেন৷