নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুন৷৷ রাজ্যে করোনা প্রতিদিন নিজের রেকর্ড ভেঙ্গে চলেছে৷ আজ একদিনে ১০৭ জন করোনা সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে৷ তাতে স্পষ্ট রাজ্যে করোনা সংক্রমণের গতি তেজি রূপ নিয়েছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গোষ্ঠী সংক্রমণের তত্ব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ জোর গলায় দাবি করেছেন, রাজ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণের কোন উদাহরণ নেই৷ আজ চেন্নাই ফেরত আরও তিন জন এবং করোনা সংস্পর্শে থাকা দুইজনের দেহে ওই মারণব্যধির সংক্রমণ মিলেছে৷ তারা সিপাহিজলা ও গোমতি জেলার বাসিন্দা বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে৷ এদিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব টুইট করে জানান, ৪৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ এদিকে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন চেন্নাই থেকে ফিরেছেন৷ ওই ৩ জন সিপাহিজলা জেলার এবং ২ জন গোমতি জেলার বাসিন্দা৷ গোমতি জেলার দুই করোনা আক্রান্ত কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসেই সংক্রমিত হয়েছেন৷ তাঁদেরকে আগরতলায় কোভিড কেয়ার সেন্টারে আনা হয়েছে৷ এদিকে, মধ্যরাতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আবারও টুইট করে এযাবৎকালের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরেছেন৷ মাত্র ৫৭৮ টি নমুনা পরীক্ষায় ১০২ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, সকলেরই বহিঃরাজ্য সফরের তথ্য রয়েছে৷ সবমিলিয়ে এখন পর্য্যন্ত রাজ্যে ৪২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৭৩ জন সুস্থ হয়েছেন৷ ৩ জন রাজ্যের বাইরে রয়েছেন৷ স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এদিনের করোনা সংক্রমিতের ঘটনায় আবারও সিপাহীজলা জেলা শীর্ষে রয়েছে৷ ওই জেলায় আজ মোট ৫০ জন করোনা সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে৷ এছাড়া ঊনকোটি জেলায় ৪১ জন, দক্ষিণ ত্রিপুরায় ৬ জন, পশ্চিম জেলায় ৩ জন, খোয়াই জেলায় ৩ জন এবং গোমতি জেলায় ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ ত্রিপুরায় করোনা-র গোষ্ঠী সংক্রমণের এখনও কোনও উদাহরণ নেই৷ আজ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরাবাসী ভীষণ সচেতন৷ তাই তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, করোনা-য় গোষ্ঠী সংক্রমণ আজ পর্যন্ত সম্ভব নয়৷ ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ৩১৬ জন করোনা-য় সংক্রমিত হয়েছেন৷ সম্প্রতি বহিঃরাজ্য ফেরত ত্রিপুরার নাগরিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে৷ ত্রিপুরা সরকার বহিঃরাজ্য ফেরত সকলের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তবুও, ত্রিপুরা এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণের স্তরে পৌঁছয়নি, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরাবাসী করোনা সংক্রমণ নিয়ে ভীষণ সচেতন৷ বিশেষ করে সচেতনতার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চল শহরকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, সিপাহিজলা জেলায় গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি, একই পরিবারের বহিঃরাজ্য ফেরত সদস্যকে ঘর থেকে অনেকটা দূরে আলাদা ঘরে রাখার ব্যবস্থা করেছে৷ অটো-তে পারস্পরিক দূরত্ব মেনে দুই যাত্রী বহন করছে৷ তাই তাঁর দাবি, সচেতনতার জন্যই ত্রিপুরায় এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণের কোনও উদাহরণ মিলেনি৷ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, করোনা-য় গোষ্ঠী সংক্রমণ আজকে পর্যন্ত সম্ভব নয়৷ তবে ভবিষ্যত নিয়ে এখনই ভবিষ্যদ্ববাণী করছি না৷প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ৩১৬ জন করোনা-য় আক্রান্ত হয়েছেন৷ অবশ্য তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়েছেন৷ সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত অধিকাংশই বহিঃরাজ্য ফেরত৷করোনা মোকাবিলায় আগরতলায় হাঁপানিয়াস্থিত আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গনে আরও একটি ১৫০ শয্যার কোভিড কেয়ার সেন্টার করা হয়েছে৷ তাতে, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ৫৮০টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপুরায়৷ আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এই খবর দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তাঁর কথায়, আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় জিবি হাসপাতালে ১০০ শয্যা রয়েছে৷ এছাড়া আইজিএম কোভিড হেলথ সেন্টারে ৩০টি, শহীদ ভগৎ সিং যুব আবাসে ৩০০টি এবং শালবাগান বিএসএফ হাসপাতালে ৩৫টি শয্যা রয়েছে৷এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরায় প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসে ৪৬৪ জন এবং বাড়িতে একান্তবাসে রয়েছেন ১২,৬১৯ জন৷ তাঁর দাবি, আজ পর্যন্ত ত্রিপুরায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩০,০০৮ জনের৷ তাতে, নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৮,২৫৮ জনের৷ তাদের মধ্যে ৩২১ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭৩ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন৷ ফলে, বর্তমানে রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৫ জন৷ তাদের মধ্যে শহীদ ভগৎ সিং জুবা আবাসে রয়েছেন ১৪২ জন এবং ১ জন জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷